রবিবারের আইপিএল লড়াইয়ে দিল্লি ক্যাপিটালসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সামনে দাঁড়াতেই পারল না সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। শুরু থেকেই হায়দরাবাদের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে ফেলার দায়িত্ব নেন মিচেল স্টার্ক।
মিচেল স্টার্কের আগ্রাসী বোলিংয়ে বড় ধাক্কা খায় হায়দরাবাদ, একের পর এক উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারও টিকতে পারেনি তারা। মাত্র ১৬৩ রানে অলআউট হয়ে যায় প্যাট কামিন্সের দল। জবাবে দিল্লি ক্যাপিটালসের দুই ব্যাটসম্যান ফ্যাফ ডুপ্লেসি ও অভিষেক পোড়েল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেন। মাত্র ১৬ ওভারের মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে সহজ জয় নিশ্চিত করে তারা। গুরুত্বপূর্ণ এই জয়ের ফলে প্লে-অফের দৌড়ে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করল ঋষভ পন্থের নেতৃত্বাধীন দিল্লি ক্যাপিটালস।
হায়দরাবাদের ইনিংসের শুরুটাই হলো দুঃস্বপ্নের মতো। মিচেল স্টার্ক প্রথম ওভার থেকেই আগ্রাসী বোলিংয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপকে নাস্তানাবুদ করতে থাকেন। তাঁর গতির সামনে একের পর এক ব্যাটসম্যান উইকেট হারিয়ে ফেলেন, কেউই বড় ইনিংস গড়ার সুযোগ পাননি। মাত্র ৩৫ রানেই ৫ উইকেট পড়ে যায়, চাপে পড়ে যায় দল। স্টার্কের বিধ্বংসী স্পেলে ম্যাচের রাশ দিল্লির হাতে চলে যায় শুরুতেই। হায়দরাবাদের ব্যাটসম্যানদের ভুলের পুরো ফায়দা তুলে নেন তিনি, একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। এমন দুর্দশার মধ্যেই বোঝা যায়, টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা ভুল ছিল হায়দরাবাদের জন্য। অভিষেক শর্মা, ট্রেভিস হেড, ঈশান কিশন এবং নীতিশ কুমার রেড্ডি—কারও পক্ষেই স্টার্কের আগ্রাসী বোলিং সামলানো সম্ভব হয়নি।
হায়দরাবাদের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মাঝেও অনিকেত বর্মা একাই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৪১ বলে ৭৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস, যা দলের স্কোরবোর্ডে কিছুটা ভরসা যোগায়। হেনরিক ক্লাসেনের সঙ্গে ৭৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়লেও সেটি বড় সংগ্রহের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ক্লাসেন ১৯ বলে ৩২ রান করে আউট হয়ে গেলে হায়দরাবাদ আবারও চাপের মুখে পড়ে। অনিকেত একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালালেও অন্য ব্যাটসম্যানরা সঙ্গ না দেওয়ায় দল বড় রান তুলতে ব্যর্থ হয়। তাঁর সাহসী ইনিংস সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত হায়দরাবাদের ইনিংস প্রতিপক্ষের সামনে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি, যা ম্যাচের গতিপ্রবাহই বদলে দেয়।
শেষদিকে কুলদীপ যাদবের ঘূর্ণি জাদুতে বিভ্রান্ত হন অনিকেত বর্মা, তাঁর বিদায়ের পর ১৬৩ রানেই থেমে যায় হায়দরাবাদের ইনিংস। শুরু থেকেই দিল্লির বোলিং আক্রমণ ছিল ধ্বংসাত্মক, মিচেল স্টার্ক একাই তুলে নেন ৫ উইকেট, আর কুলদীপ যাদব ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে দেন। দিল্লির নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে লড়াই করার সুযোগই পায়নি হায়দরাবাদ।
১৬৪ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দিল্লির ওপেনাররা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলতে থাকেন। জ্যাক ফ্রেজার ম্যাকগার্ক ৩২ বলে ৩৮ রান করেন, তবে আসল বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন ফ্যাফ ডুপ্লেসি। মাত্র ২৭ বলে ৫০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন তিনি, যা হায়দরাবাদের বোলারদের আরও চাপে ফেলে দেয়। লোকেশ রাহুল বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হলেও, শেষদিকে অভিষেক পোড়েল ও ট্রিস্টান স্টাবস দলকে জয় এনে দেন। হায়দরাবাদের বোলিং আক্রমণ এদিন কার্যত নিষ্প্রভ ছিল, ফলে দিল্লি মাত্র ১৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই সহজ জয় নিশ্চিত করে।
লোকেশ রাহুল ব্যর্থ হলেও বাংলার তরুণ ব্যাটসম্যান অভিষেক পোড়েল ও ট্রিস্টান স্টাবস জয়ের কাজ সহজ করে দেন। পোড়েল ১৮ বলে ৩৪ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে দলকে সহজ জয়ের পথে নিয়ে যান।
হায়দরাবাদের হয়ে জিশান আনসারি ৪২ রান খরচায় ৩টি উইকেট তুলে নিলেও দিল্লির জয়ের পথে বড় কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারেননি। শুরু থেকেই দিল্লির ব্যাটসম্যানরা দাপট দেখান, আর হায়দরাবাদের বোলাররা তাতে প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হন। বিশেষ করে প্যাট কামিন্স, উইয়ান মুলডার ও হর্ষল প্যাটেল একেবারেই অনুজ্জ্বল ছিলেন। কামিন্স নেতৃত্ব দিলেও বল হাতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি। মুলডারও লাইন-লেংথ ধরে রাখতে ব্যর্থ হন, যার ফলে দিল্লির ব্যাটসম্যানরা সহজেই বড় শট খেলেন। হর্ষল প্যাটেলও রান আটকাতে পারেননি এবং কার্যকরী ডেলিভারির অভাবে উইকেট তুলতে ব্যর্থ হন।
হায়দরাবাদের এই দুর্বল বোলিং পারফরম্যান্সই দিল্লির জয়ের রাস্তা সহজ করে দেয়। ফ্যাফ ডুপ্লেসি ও অভিষেক পোড়েল শুরুর চাপ সামলে দলের ইনিংসকে মজবুত ভিত্তি দেন এবং পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা সেই ধারা অব্যাহত রাখেন। বোলারদের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি চলে যায় দিল্লির হাতে। সহজ জয় তুলে নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে গুরুত্বপূর্ণ দুই পয়েন্ট যোগ করল দিল্লি ক্যাপিটালস, যা তাদের প্লে-অফের লড়াইয়ে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিল।
