প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সদর দফতর পরিদর্শন ঘিরে নতুন রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এই সফর ঘিরে বিরোধীরা নানা প্রশ্ন তুলছে, বিশেষ করে শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)-র নেতা সঞ্জয় রাউতের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর। তিনি দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্ভবত আগামী সেপ্টেম্বর মাসে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন এবং তাঁর উত্তরসূরি নির্ধারণে আরএসএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। রাউতের দাবি, মোদী এবং সংঘের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে গোপন বৈঠকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিজেপি এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে এবং একে ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দিয়েছে।
মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস রাউতের মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ করেছেন। তিনি পাল্টা বলেছেন, “আমাদের সংস্কৃতিতে, যতদিন বাবা বেঁচে থাকেন, ততদিন উত্তরাধিকার তৈরির আলোচনা হয় না।” তিনি আরও বলেন, ২০২৯ সালেও নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী পদে থাকবেন এবং তাঁর নেতৃত্বেই দল এগিয়ে যাবে।
বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর আরএসএস সদর দফতর পরিদর্শন শুধুই একটি সৌজন্যমূলক সফর ছিল। এর সঙ্গে নেতৃত্ব পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বিরোধীরা বলছে, সংঘের সদর দফতরে এই বৈঠকের রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে, কারণ আরএসএস বরাবরই বিজেপির নীতি নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করে।
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৪ সালের পর মোদীর ভবিষ্যৎ নিয়ে গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে আগেই শুরু হয়েছিল। তবে বাস্তবে মোদী আসলেই অবসর নিতে চলেছেন কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই সফরের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির অন্দরেও কিছু গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিজেপির একাংশ মনে করছে, ভবিষ্যতে নেতৃত্ব বদলের সম্ভাবনা থাকলেও এখনই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। মোদীর নেতৃত্বে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয় লাভের পর দল নতুন কৌশল গ্রহণ করতে পারে।
বিরোধীদের অভিযোগ, সংঘ পরিবারই মূলত মোদীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। অন্যদিকে, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বলছে, মোদীই দলের একমাত্র গ্রহণযোগ্য নেতা এবং তাঁর নেতৃত্বেই আগামী দিনে বিজেপি এগিয়ে যাবে।
নাগপুর সফর যে কেবলমাত্র একটি রুটিন ভিজিট ছিল না, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একপ্রকার নিশ্চিত। কারণ অতীতেও বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আগে মোদী সংঘের সদর দফতর পরিদর্শন করেছেন। এবারও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে আলোচনা চলবে। তবে আপাতত বিজেপি এবং আরএসএস এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ভবিষ্যতে এই সফরের কোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।