শীতকাল মানেই পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রেকিংয়ের বাড়তি আকর্ষণ। বরফে মোড়া পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই এই সময়ে ট্রেকিংয়ে বের হন। কিন্তু উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে ট্রেকিং করা সহজ নয়। সামান্য অসতর্কতা বড় বিপদের কারণ হতে পারে। তাই নিরাপদ ট্রেকিংয়ের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
উচ্চতায় অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকায় শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং উচ্চতাজনিত অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। ফলে ট্রেকিংয়ে যাওয়ার আগে শারীরিক ফিটনেস গড়ে তোলা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা এবং কার্ডিওভাসকুলার ওয়ার্কআউট করলে উচ্চতায় শরীর মানিয়ে নিতে সহজ হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাঁদের অন্তত এক মাস আগে থেকে শারীরিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
ট্রেকিংয়ের জন্য সঠিক গিয়ার থাকা আবশ্যক। গরম পোশাক, জলরোধী জ্যাকেট, গ্লাভস, উষ্ণ মোজা, ট্রেকিং বুট, সানগ্লাস, সানস্ক্রিন ও স্কার্ফ সঙ্গে রাখা উচিত। ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, তাই মাল্টি-লেয়ার পোশাক পরা ভালো। পাশাপাশি, ব্যাকপ্যাক হালকা হওয়া উচিত যাতে চলার পথে বাড়তি চাপ না পড়ে।
ট্রেকিংয়ের সময় পানিশূন্যতা বড় সমস্যা হতে পারে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় জল পান করার ইচ্ছে কমে যায়, কিন্তু শরীর আর্দ্র না থাকলে ক্লান্তি দ্রুত আসে। তাই নিয়মিত গরম জল ও ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান করা জরুরি। সঙ্গে শুকনো ফল, প্রোটিন বার, চকলেট ও হালকা খাবার রাখা উচিত, যাতে শক্তি কমে না যায়।
নতুন ট্রেকারদের জন্য অভিজ্ঞ গাইডের সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়া মুহূর্তের মধ্যে বদলে যেতে পারে। স্থানীয় গাইডরা পথঘাট ও বিপজ্জনক এলাকা সম্পর্কে জানেন, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমায়। অনেক সময় তুষারধস, হিমবাহ ফাটল বা বরফঢাকা পথের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে, যা এড়াতে গাইডের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ওঠার সময় শরীরকে ধীরে ধীরে উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। হঠাৎ করে অনেক উঁচুতে উঠে গেলে উচ্চতাজনিত অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। সাধারণত প্রতিদিন ৩০০-৫০০ মিটার উচ্চতায় ওঠার পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। যদি মাথাব্যথা, বমিভাব, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরা শুরু হয়, তবে উচ্চতা আরও বাড়ানো উচিত নয় এবং প্রয়োজনে নিচে নেমে আসা উচিত।
ট্রেকিংয়ের সময় পরিবেশ সচেতনতা বজায় রাখা জরুরি। পাহাড়ে প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলার ফলে পরিবেশ দূষিত হয় এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। অনেক ট্রেকিং রুট সংরক্ষিত এলাকা বা জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে যায়, যেখানে পরিবেশ রক্ষার বিশেষ নিয়ম মানতে হয়। তাই সঙ্গে একটি ছোট ব্যাগ রাখা উচিত, যেখানে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বা আবর্জনা জমা করে পরে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা যায়।
শীতকালীন ট্রেকিংয়ের সময় কিছু ভুল করা বিপজ্জনক হতে পারে। অনেকেই দ্রুত উপরে উঠতে চান, যা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অপরিচিত শর্টকাট পথ এড়ানো উচিত, কারণ অনেক পাহাড়ি পথ বরফে ঢাকা থাকায় দিকভ্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একা ট্রেকিং করাও নিরাপদ নয়, কারণ দুর্ঘটনা ঘটলে সাহায্য পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ট্রেকিং একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে, যদি সমস্ত সুরক্ষা বিধি মেনে চলা হয়। সঠিক পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং নিরাপত্তার দিকগুলি মাথায় রাখলে যেকোনো ট্রেকিং সফল ও উপভোগ্য হয়। তাই যাত্রার আগে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন, পরিবেশ সচেতন থাকুন এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
