অভিজিৎ বসু
রামের ভূতে আজ রাস্তায় তৃণমূল। একেই বলে ঠেলায় পড়লে ভূতের মুখেও শোনা যায় রাম নাম। আসলে সেই ত্রেতা যুগের রাম যে কি করে এই ঘোর কলি কালে এই বঙ্গে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো সেটাই বোঝা দায়। রাম নিয়ে যে হৈ চৈ হুল্লোড় পড়ে গেছে চারিদিকে। যে রাম একদা এই বঙ্গে সেই বামেদের কাছে অচ্ছুত ছিলেন একসময়। যে রাম নাম সত্ত হ্যায় করে বামেরা রামকে কিছুতেই এই রাজ্যে প্রবেশ করতে দেয়নি কোনোভাবেই। সেই বামেদের একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা জ্যোতি বসু বলেছিলেন, কোনমতেই ওই বর্বর বিজেপিকে এই রাজ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।
সেই ৩৪ বছরের বাম শাসনে বিশ্বাসী রাজ্যের মানুষজনও কোনোদিন সেই আমলে এত রাম এর রমরমা অবস্থা দেখতে পায়নি সেই বামেদের আমলে বা দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাদের। কিন্তু আজ সেই রাজ্যে জয় শ্রী রাম ধ্বনিতে মুখরিত আকাশ আর বাতাস। রামকে স্মরণ করে পথে নেমেছে রাম ভক্ত আট থেকে আশির বিজেপি নেতারা। কারণ প্রভু শ্রীরাম যে তাঁদের একমাত্র ভরসার দেবতা আর প্রাণের দেবতা। আর যদি রামকে স্মরণ করে রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বিজেপি এগিয়ে যায় কিছুটা তাদের থেকে তাহলে যে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে শাসক দল তৃণমূলকে। আর তাই তাঁরাও আজ পথে নেমে পড়েছেন একসাথে হাসি হাসি মুখ করে জয় শ্রীরাম মুখে না বললেও বলছেন, রামচন্দ্র সবার কারুর একার নয় তিনি।
সত্যিই তো ভগবান শ্রী রামচন্দ্র তো সবার কাছেই সমান তিনি তো কারুর একার নন। রাজ্যে বিজেপির এই রমরমা না হলে কি আর এই রাজ্য প্রভু শ্রী রামচন্দ্রের এত বাড়বাড়ন্ত হতো কে জানে। আর তাই বোধহয় সকাল সকাল সেজে গুজে ঘাস ফুলের দলের বিধায়ক গেরুয়া পোশাক পরে গলায় উড়নি জড়িয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। গলদঘর্ম হয়ে বলছেন, জয় রামনবমী, ভগবান রামচন্দ্রের কাছে আমরা প্রার্থনা করছি মানুষের কল্যাণ হোক। উৎসব যার যার, ধর্ম সবার। আমরাও তাই পথে নেমেছি। যে সাংসদ অসুস্থ ছিলেন বলে ওয়াকফ এর ভোটাভুটিতে সংসদে উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। সেই তৃণমুল সাংসদ আজ চোখে রোদ চশমা পড়ে রাস্তায় নেমে বলছেন,শান্তিতে থাকুক মানুষ, বিদ্বেষ ভুলে সবাই ভালো থাকুন এক সাথে থাকুন কোনো ভেদাভেদ নয়। তাহলে কি এই মা মাটির মানুষের আমলে রাজ্যের মানুষ শান্তিতে নেই?
যে দলের দলনেত্রী একদা রাম নাম শুনে গাড়ী থেকে নেমে পড়েছিলেন রাস্তায় প্রতিবাদ জানাতে কসুর করেন নি তিনি একদিন। পারলে রাম নাম শুনে প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন তিনি জনসমক্ষে। আর আজ রামের ঠেলায় আর রাম নামের মাহাত্ম্যে সেই দলের নেতা, নেত্রীরা, বিধায়ক আর সাংসদরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন। আর বলছেন ভগবান শ্রী রামচন্দ্র তো আমাদেরও। সত্যিই অসাধারণ এই রাম জন্মদিনে রামভক্তদের দাপাদাপি। যা দেখে রাজনীতির ময়দানে কান পাতলে যখন রাম বাম এর যোগসাজস এর কথা শোনা যায় ফিসফিস করে। ঠিক তেমনি এই রাম নবমীর দিন রামকে স্মরণ করে ,আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার কি নিরন্তর প্রয়াস দুই বিপরীত মেরুর দুই রাজনৈতিক দলের। অলক্ষ্যে থেকে প্রভু শ্রী রামচন্দ্রের মুখেও ফুটে উঠেছে স্মিত হাসি। মনে মনে তিনি হয়তো ভাবছেন, যাক আমায় স্মরণ তো করছে সবাই এই ঘোর কলি কালে এটাই অনেক বড় কথা। না হলে যে কবেই আমায় কোন যুগের সেই রাম লীলার কথা ভুলেই গেছিলো এই বঙ্গের মাটি আর সেই সুজলা সুফলা মা মাটির মানুষজন।
