ভারতের দক্ষিণতম প্রান্তে রামেশ্বরম দ্বীপের সঙ্গে সংযোগকারী ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক পাম্বান সেতুর বদলে বদলে গড়ে উঠেছে নতুন পাম্বান সেতু।পুরোনো সেতুটি রুগ্ন হয়ে পড়ায় এই সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মণ্ডপম রেলওয়ে স্টেশন এবং রামেশ্বরম দ্বীপের মধ্যে এই নতুন রেলওয়ে সমুদ্র সেতু কেবল পুরাতন পাম্বান সেতুর বদলে তৈরি হওয়া শুধু একটা ব্রিজ নয়, এটা হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি ক্ষেত্রের একটা বিস্ময়। সমুদ্রের উপর তৈরি হওয়া নতুন সেতুর উপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে ট্রেন। আনুমানিক ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২.০৭৮ কিলোমিটার এই নতুন সেতু হয়ে উঠেছে ভারতের সবচেয়ে আইকনিক প্রকল্পগুলোর একটি। রামায়ণের বর্ণনা অনুযায়ী, রামসেতুর নির্মাণ শুরু হয়েছিল রামেশ্বরমের ধনুষকোড়ি অঞ্চল থেকে, তাই এই সেতুর একটি গভীর সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে।
ভারতের প্রথম সমুদ্র সেতু
মূল পাম্বান সেতু, ১৯১৪ সালে তৈরি হয়েছিল। এটাই ছিল ভারতের প্রথম সমুদ্র সেতু। এই সেতু তামিলনাড়ুর মূল ভূখণ্ড (মণ্ডপম শহর) থেকে রামেশ্বরম দ্বীপকে জুড়ে দিয়েছিল। এর শের্জার রোলিং লিফট স্প্যান জাহাজ চলাচলের জন্য নিচ দিয়ে পথ করে দিত। রামেশ্বরমের পবিত্র রামনাথস্বামী মন্দিরে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের জন্য এই সেতু পরিবহন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। শেষ দিকে রুগ্ন হয়ে পড়ায় ২০২২ সালে সেখানে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কারা গড়ল নতুন পাম্বান সেতু?
এর পরেই ভাবা হয় নতুন পাম্বান সেতুর কথা। রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড বাস্তবে রূপায়িত করার দায়িত্বে এগিয়ে আসে। নবনির্মিত সেতুর এই অংশের প্রযুক্তি চমকে দেওয়ার মতো। এই ব্রিজই হল প্রথম সমুদ্র সেতু যাতে আছে ৭২ মিটার ভার্টিকাল লিফট। মোটর এবং ক্রেনের সহজে মাত্র সাড়ে পাঁচ মিনিটে জাহাজ চলাচলের পথ খুলে দেওয়া যায়। নতুন সেতু ঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে ভূমিকম্প সইতে পারে সবই। আরভিএনএল রেল মন্ত্রণালয়, দক্ষিণ রেলওয়ে, তামিলনাড়ু সরকার এবং অসংখ্য কন্ট্রাক্টর এবং পরামর্শদাতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। এই প্রকল্পে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পরিবেশ বিজ্ঞানের ক্রস-ফাংশনাল টিম পাম্বান সেতুকে বাস্তবে রূপ দিতে অবদান রেখেছে। আর এটি গর্বের বিষয় যে নতুন পাম্বান সেতু তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ ভারতীয় উদ্যোগে। ব্যয়ে তৈরি নতুন পম্বন সেতুর হাত ধরে পর্যটন এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলবে বলেও মনে করছে রেল।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার নতুন সেতু
রেলপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটনের দিক থেকেও নতুন সেতুটি খবুই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে রয়েছে ৯৯টি স্প্যান এবং একটি ৭২.৫ মিটার দীর্ঘ ভার্টিকাল লিফট স্প্যান, যা ১৭ মিটার উচ্চতায় উঠতে পারে। এতে জাহাজ চলাচলে সুবিধা হবে এবং একই সঙ্গে ট্রেন চলাচলেও কোনও বাধা থাকবে না। এই সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল রিইনফোর্সমেন্ট। লাগানো হয়েছে হাই-গ্রেড প্রটেক্টিভ পেইন্ট এবং সম্পূর্ণভাবে ওয়েল্ডেড জয়েন্ট।এতে মজবুত হওয়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন অনেকটাই কমে গেছে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এতে ডুয়াল রেল ট্র্যাকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সমুদ্রঘেঁষা পরিবেশ হলেও সেতুর গায়ে থাকা পলিসিলোক্সেন কোটিং তাকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করবে।পাম্বান ব্রিজকে এখন বিশ্বের বিখ্যাত সেতুগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোল্ডেন গেট ব্রিজ, ব্রিটেনের টাওয়ার ব্রিজ এবং ডেনমার্ক-সুইডেনের ওরেসুন্ড ব্রিজ।
