সপ্তাহের শুরুতেই ভারতীয় শেয়ার বাজারে নেমে এল প্রবল ঝড়। বিনিয়োগকারীদের চোখের সামনে একের পর এক সূচক হারাতে থাকে ভরসা। সেনসেক্স এক লাফে নামল ২৫৬৫ পয়েন্টের বেশি, থামল ৭২,৮০০-এর নিচে। নিফটিও ছাড় পায়নি, ৮৩০-এরও বেশি পয়েন্ট হারিয়ে ২২ হাজারের কোঠায় এসে ঠেকেছে। এই আকস্মিক পতনে বিনিয়োগকারীদের মনে ফের জেগেছে অনিশ্চয়তা। বাজারে লেনদেন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই এভাবে সূচকের খরা নেমে আসায় আর্থিক দিক থেকে এক ভয়াবহ সংকেত মিলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাজারের এমন আচরণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি লগ্নিকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রবল উদ্বেগ, শুরু হয়েছে ব্যাপক ক্ষতির হিসেব।
সকাল গড়াতেই শেয়ার বাজারে শুরু হয় প্রবল ধস। মাত্র কিছু সময়ের ব্যবধানে সেনসেক্স প্রায় ২৭০০ পয়েন্ট পিছিয়ে যায়, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে দেয়। নিফটি কোনওরকমে ২২ হাজারের ঘরে টিকে থাকলেও বাজারে ভয় ও অস্থিরতা দানা বাঁধে। বিশেষ করে ছোট এবং মাঝারি সংস্থার শেয়ারে বড়সড় ধাক্কা দেখা যায়—স্মল ক্যাপ সূচক নামল ১০ শতাংশেরও বেশি, আর মিড ক্যাপ সূচকে পতন ঘটেছে প্রায় ৭.৩ শতাংশ। এই আকস্মিক পতনে বহু লগ্নিকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন, বাজারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে অনিশ্চয়তার মেঘ। বড় সংস্থাগুলির পাশাপাশি ছোট শেয়ারেও ভর করেছে হতাশা।
সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছে নামী কোম্পানিগুলোর শেয়ার। টাটা স্টিল ১১ শতাংশের বেশি খুইয়েছে। টাটা মোটরসের পতন ৮ শতাংশের কাছাকাছি। টেক মাহিন্দ্রা, ইনফোসিস, ও এইচসিএল টেক—সবই লাল চিহ্নে, ক্ষতির হার যথাক্রমে ৬.৭০ ও ৬ শতাংশ। বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ, বহু মানুষের সঞ্চয় উধাও।
বিশ্ব অর্থবাজারেও পড়েছে এই ধসের প্রতিধ্বনি। আমেরিকার বড় দুই সূচক—এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ও ন্যাসডাক—বড়সড় পতনের সাক্ষী হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়িয়েছে দুশ্চিন্তা। শুধু পশ্চিমেই নয়, প্রভাব পড়েছে পূর্বেও। জাপানের নিক্কেই সূচক তীব্রভাবে নেমেছে নিচে, দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি-তেও দেখা গেছে তীব্র অবনমন। বাজারে আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়েছে সর্বত্র।
ইউরোপ থেকে এশিয়া—কোনও অংশই এই অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে মুক্ত নয়। টাকার দাম, বন্ড মার্কেট, এমনকি ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকেও ছড়াচ্ছে অনিশ্চয়তার ছায়া। আর্থিক মহল এই পতনের কারণ নিয়ে বিশ্লেষণে ব্যস্ত, কিন্তু সাধারণ লগ্নিকারীদের মুখে একটাই প্রশ্ন—এখন কী হবে?