মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ যা বলছেন, আগামীকাল যে তাতেই স্থির থাকবেন এমন কোনও গারান্টি নেই। কয়েক দিন ধরে এমনটাই দেখে চলেছে বিশ্ব। সদ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর যে বিশাল ও নানা পরিমাণের ট্যারিফ চাপিয়েছিলেন তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছেন। কেবলমাত্র বাদ থেকেছে চিন। বেজিংয়ের ক্ষেত্রে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে শুল্ক ১২৫ শতাংশে বাড়িয়েছেন।
সব দেশে স্থগিত হলেও চিনে শুল্ক ১২৫ শতাংশ, কেন?
ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই তলানিতে ঠেকেছে চিন-মার্কিন সম্পর্ক। প্রথমে চিনা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপায় আমেরিকা। পরে তা আরও ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। এর বিরুদ্ধে চুপ করে বসে না থেকে পাল্টা মার্কিন পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করে চিন। এরপর ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল চিনা পণ্যে আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক চাপান। এর পরেই ফুসে উঠে পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে মার্কিন পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করে বেজিং। এতেই বেজায় রেগে গিয়ে চিন শুল্ক প্রত্যাহার না করলে চিনের পণ্যে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে দেন ট্রাম্প। চিন মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়বে এমন ঘোষণা করায় সব মিলিয়ে ১০৪ শতাংশের শুল্ক আরোপ করে দেয় আমেরিকা।ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করতেই ফের ‘প্রত্যাঘাত’ করে চিন।পাল্টা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপায় বেজিং।এখন পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে আমেরিকার বাজারে চিনা পণ্যে ১০৪ শতাংশ শুল্ক চাপার বিনিময় চিনা বাজারে মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক চেপেছে।ট্রাম্পের দাবি, “বিশ্ব বাজারের প্রতি কোনও সম্মান দেখায়নি চিন।” সেই কারণেই চিনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত।
কেন ৯০ দিন শুল্ক স্থগিত অন্য দেশের?
ডোনাল্ড ট্রাম্প চিন বাদে সব দেশের জন্য ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিত করার ঘোষণা করেছেন। ট্রাম্প জানান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথিত বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলা করার জন্যই এই শুল্কগুলো চালু করেছিলেন, ৭৫টিরও বেশি দেশ তার সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়নি।সেই কারণেই তিনি তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ৯০ দিনের মধ্যে, শুধুমাত্র ১০ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কেন ট্রাম্প শুল্ক স্থগিত করলেন? জানা গেছে কয়েকদিন ধরেই রিপাবলিকান দলের সহকর্মী এবং ব্যবসায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শুল্ক বন্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কারণ একটি বড় বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা, বিশ্ব বাজারে ধস এবং আসন্ন বিশ্ব মন্দার উদ্বেগ বাড়ছিল। কিন্তু কারও কথা না শুনে ট্রাম্প নিজের অবস্থানেই অটল ছিলেন। তিনি জানান , “আমার নীতি কখনো বদলাবে না।” তবে, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের মধ্যে বন্ড মার্কেটের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগই ট্রাম্পকে তার পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থা স্থগিত করতে বাধ্য করেছে।
তবে কী ধাক্কা খাবে ট্রাম্পনীতি? মন্দাই হবে ভবিতব্য?
বুধবার রাতে চিন ছাড়া বাকি সব দেশের উপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত হোয়াইট হাউস থেকে মেলেনি। তবে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক স্থগিতের আকস্মিক পদক্ষেপে বুধবার ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার উপরে উঠেছে।
তেলের দাম চার শতাংশের বেশি লাফিয়েছে, এবং ডলারও শক্তিশালী হয়েছে। তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ ঘোষণার পরেও স্বস্তি মিলবে না বিশ্ব অর্থনীতির।বরং, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তেও আর্থিক মন্দা কাটানো যাবে না, এমনটাই মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। জেপি মর্গ্যান আগেই জানিয়ে দিয়েছে ট্রাম্পের নীতির ফলে আগামী দিনে ৬০ শতাংশ মন্দার মুখ দেখতে চলেছে বিশ্ব। বিশেষজ্ঞরা বারবার জানাচ্ছেন বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিতে বার বার বদলের প্রভাব পড়তে চলেছে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ আর্থিক বিকাশে।গোল্ডম্যান স্যাক্সের অর্থনীতিবিদেরাও আগামী ১২ মাসে অন্তত ৪৫ শতাংশ মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছেন। গত সপ্তাহেই আমেরিকায় ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে আন্দোলন শুরু হয় মার্কিন মুলুকে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামেন। আমেরিকার শেয়ার বাজারেও অস্থিরতা তৈরি হয়।