বলিউডে এক সময় তাঁকে ‘সিরিয়াল কিসার’ বলে ডাকা হতো। ইমরান হাশমির নাম শুনলেই দর্শকদের চোখে ভেসে উঠত চুম্বনদৃশ্যে ভরপুর রোম্যান্টিক সিনেমার ছবি। তবে সময়ের সঙ্গে সেই ধারণা বদলেছেন তিনি নিজেই, কঠিন চরিত্রে অভিনয় করে প্রমাণ করেছেন যে শুধুই রোম্যান্স নয়, বাস্তবধর্মী ও গাঢ় চরিত্রেও সমান দক্ষ তিনি।
সম্প্রতি একটি পডকাস্টে নিজের কেরিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে মুখ খুলেছেন ইমরান। জানিয়েছেন, তাঁর কেরিয়ারের শুরুতে মানুষ তাঁকে কেবল এক ধরনের চরিত্রেই সীমাবদ্ধ করে রাখতেন। “লোকে ভাবত আমি শুধু চুমু খেতে পারি, অভিনয় জানি না,”— বলেন তিনি। এমন ধরনের মন্তব্য শুনে প্রথমে হতাশ হয়েছিলেন ঠিকই, তবে থেমে যাননি। বরং নিজের অভিনয়দক্ষতা দিয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে দিয়েছেন দর্শকের সেই পুরনো মানসিকতা।
এই বদলের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন ছিল ‘সাংহাই’ ছবি। দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রাজনৈতিক থ্রিলারে ইমরান এমন এক চরিত্রে অভিনয় করেন, যা সম্পূর্ণ আলাদা ছিল তাঁর আগের কাজগুলোর থেকে। ছবিটি মুক্তির পর দর্শক ও সমালোচক— দুই মহল থেকেই প্রশংসা পান তিনি। সেই প্রশংসাই তাঁকে নতুন আত্মবিশ্বাস দেয়, নিজেকে অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে।
২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তিনি একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন বলিউডকে— ‘জন্নত’, ‘মার্ডার ২’, ‘ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন মুম্বই’, ‘দ্য ডার্টি পিকচার’-এর মতো ছবিতে তাঁর রোম্যান্টিক ইমেজ যতটা প্রশংসিত হয়েছে, ততটাই চর্চিতও ছিল। তবে ওই সময়ের পরে তাঁর কেরিয়ারে এক নতুন মোড় আসে, যেখানে তিনি আরও পরিণত এবং ভাবনাসম্পন্ন চরিত্রে ধরা দেন পর্দায়।
পডকাস্টে তিনি জানান, এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে নিজের প্রতি বিশ্বাস, পরিবার ও ঘনিষ্ঠ মহলের সহায়তা এবং পরিচালকদের দেওয়া সুযোগ। তিনি বলেন, “কোনও দিন আমি আমার ইমেজ নিয়ে সমস্যায় পড়িনি। তবে আমি জানতাম, দর্শক একদিন আমায় অভিনেতা হিসেবেও গ্রহণ করবে। শুধু দরকার ছিল উপযুক্ত চরিত্র, এবং আমি সেটাই খুঁজছিলাম।”
বর্তমানে ইমরান হাশমি ব্যস্ত তাঁর নতুন ছবি ‘গ্রাউন্ড জিরো’-এর প্রচারে। এই ছবিতে তিনি বিএসএফ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করছেন, যা তাঁর অভিনয় কেরিয়ারের আরেকটি বড় পরীক্ষার জায়গা হতে চলেছে। ছবি পরিচালনা করছেন তেজস দেওস্কার, এবং এটি মুক্তি পাবে ২৫ এপ্রিল।
চলচ্চিত্র জগতে স্টিরিওটাইপ ভাঙা সহজ কাজ নয়। তবু ইমরান হাশমির মতো অভিনেতারা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে শুধুমাত্র ইমেজ নয়, প্রতিভা এবং ধৈর্য থাকলে দর্শকের ভাবনাও পরিবর্তন করা সম্ভব। আজ তিনি শুধু ‘সিরিয়াল কিসার’ নয়, এক জন পরিণত অভিনেতা হিসেবেই বলিউডে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।