বলিউডের ভাইজান সালমান খান শুধু একজন সুপারস্টার নন, বরং একজন যোদ্ধাও। কারণ তিনি বছরের পর বছর ধরে লড়ে চলেছেন এক বিরল ও যন্ত্রণাদায়ক রোগের সঙ্গে, যার নাম ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া। এই রোগ এতটাই যন্ত্রণাদায়ক যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে ‘সুইসাইড ডিজিজ’ নামেও ডাকা হয়।
২০০৭ সালে ‘পার্টনার’ ছবির শুটিং চলাকালীন এই রোগের উপসর্গ প্রথম প্রকাশ পায় তার মধ্যে। মুখের এক পাশে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ শকের মতো ব্যথা শুরু হয়, যেটা ধীরে ধীরে নিয়মিত হয়ে ওঠে। ব্যথার তীব্রতা এতটাই ছিল যে সালমান কথা বলা, হেসে ওঠা বা জল খাওয়াতেও কষ্ট পেতেন। এই রোগ তার ব্যক্তিগত জীবন ও অভিনয়জীবন, দুটিতেই প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছিল।
২০১১ সালে, ‘বডিগার্ড’ ছবির মুক্তির সময়, সালমান যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে চিকিৎসা করান। সেখানে তার মস্তিষ্কের ট্রাইজেমিনাল নার্ভে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা স্বস্তি পেলেও, এই রোগ পুরোপুরি সেরে যায় না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং নিয়মিত চিকিৎসা ও মনোভাব ঠিক রেখে তবেই এটিকে সামলানো যায়।
ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া মূলত ট্রাইজেমিনাল নার্ভে চাপ পড়ার কারণে হয়। এটি এমন একটি স্নায়ু যা মুখের অনুভূতির জন্য দায়ী। কোনও কারণে সেই নার্ভের গায়ে ধমনি বা রক্তনালী চেপে বসলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কখনও টিউমার বা স্নায়ুর রক্ষাকারী আবরণ ক্ষয় হলেও এই রোগ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা হিসেবে অনেক সময় অ্যান্টিকনভালসেন্ট ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এগুলো স্নায়ুর অতিরিক্ত উত্তেজনা কমিয়ে দেয়। তবে ব্যথা যদি সহ্যের বাইরে চলে যায়, তবে অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ। সালমান খানের ক্ষেত্রেও অস্ত্রোপচার কিছুটা ফলপ্রসূ হয়েছে।
সালমান একাধিকবার নিজের অভিজ্ঞতা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “এই ব্যথা কাউকে বোঝানো যায় না। এটা এমন এক অনুভূতি, যা মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমি সেই পর্যায় পার করে এসেছি।”
তাঁর এই খোলামেলা স্বীকারোক্তি বহু মানুষকে এই রোগ সম্পর্কে সচেতন করেছে। ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ায় ভোগা বহু মানুষ আজ সাহস খুঁজে পান সালমান খানের অভিজ্ঞতা থেকে। এই রোগ শুধু শারীরিক নয়, মানসিক দিক থেকেও দুর্বল করে তোলে মানুষকে।
তবে সালমান তার কাজ থামাননি। যন্ত্রণার মাঝেও তিনি অভিনয় করেছেন একের পর এক হিট সিনেমায়, যা প্রমাণ করে তিনি কতটা মানসিকভাবে শক্ত। আজও তিনি নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সচেতন জীবনযাপন করে চলেছেন।
এই রোগে আক্রান্ত প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সালমান খান এক প্রেরণার নাম। তার জীবনযুদ্ধ বলছে, ব্যথা থাকলেও থেমে যাওয়া যায় না। লড়াই চালাতে হয়, সব বাধা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।