অভিজিৎ বসু
ভোর থেকেই মোবাইল ফোনে ভেসে উঠছে বাংলা শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর হিড়িক। দীঘা বা পুরীর সমুদ্রের ঢেউ এর মত আছড়ে পড়ছে যেনো মোবাইল এর স্ক্রীনে সাত সকাল থেকেই ‘শুভ নববর্ষ’। কানাডা থেকে কাঁকিনাড়া, কল্যাণী থেকে কাকদ্বীপ বা হায়দরাবাদ থেকে পুনে বাকি নেই কেউ। ঘুম ভাঙা চোখে কেমন ঝিম ধরা বৈশাখের প্রথম সকালে ছাদের কার্নিশে বসে একা একা কাকের চিৎকার, ঘুঘুর মন কেমন করা ডাক, নিম গাছের পাতায় তখন বোশেখের প্রথম রোদ ঝলমলে সকাল। হ্যাঁ, আজ যে আমাদের পয়লা বৈশাখ। যে বৈশাখ আমাদের প্রাণের আরাম আর আত্মার শান্তি।
আসলে এই যে কারুর সাথে দেখা না হওয়া, যোগাযোগ না করা, আর তাদের যে কেউ দুম করে ভালো থাকার শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা দেওয়া এটা কেমন যেন লাগে আমার আজকাল। সেই বকের মাঝে হাঁসের দলের মিশে যাওয়ার মত। তবু গোপন অভিসার এর মতোই ছড়িয়ে দেওয়া শুভ কামনা নতুন বছরে একে অপরকে জানান দেওয়া আমি আছি তোমার পাশে অনেক দূরে থেকেও। ওই শুকনো মোবাইল এর মাধ্যমে সমাজমাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা প্রাণপণে।
আসলে এই যে বছরের কটি দিনে এই ভাবেই জানান দেওয়া একে অপরকে মুঠো ফোনে বন্দী হয়ে। যাঁদের সাথে একসাথে ঘুরেছি, কাজ করেছি, একসাথে দিন যাপন করেছি, জীবনের নানা চড়াই আর উৎরাই পার করে হেসে খেলে সময় কাটিয়েছি একদিন সেই সব দিনকে কিছুটা হলেও ভুলে গিয়েই কি এই স্মরণ করা? কে জানে, হয়তো তাই।
তাই আমি বেশি তাড়াহুড়ো না করে লুকিয়ে আত্মগোপন করে শুভেচ্ছা জানানোর ঢল নেমেছে যেখানে সেখানে গা না ভাসিয়ে মুখেই জনা কয়েক মানুষকে শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম মোবাইল ফোনে। সেই চেনা পরিচিত কিছু মানুষজনকে ফোন করে বললাম, দাদা গলাটা শুনতে চাই একটু এই আজকের দিনে। কেউ খুশি হলেন বললেন বাহ এটা বেশ ভালো লাগল। আবার কেউ মেট্রো রেলের ঝমঝম আওয়াজে ফোন কেটে যাওয়ার কথা বললেন। কেউ ভাবলেন সত্যিই অসাধারণ এই পাগলামো আজকের দিনে কেউ গলা শুনবো বলে ফোন করে নাকি এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। যে দুনিয়া মৃতপ্রায় হয়েই বেঁচে থাকে বৈশাখের প্রথম সকালে আমাদের সবার কাছে।