রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) আইপিএল ২০২৫-এ দারুণ ছন্দে রয়েছে। দলটি ইতিমধ্যে ছয়টি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জয়লাভ করেছে। এই জয়ের ধারায় উচ্ছ্বসিত সমর্থকরা মনে করছেন, বহু প্রতীক্ষিত আইপিএল শিরোপা এবারই হাতে আসতে পারে। এর সঙ্গে অনেকে যুক্তি দিচ্ছেন ‘১৮’ নম্বর তত্ত্ব—যেখানে কোহলির জার্সি নম্বর ১৮ এবং আইপিএলের ১৮তম আসর মিলিয়ে এক ধরণের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন তারা। যদিও কোহলি এমন ভাবনাকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং সেটিকে মজার ছলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
RCB-এর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কোহলিকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে ভক্তরা কেন বিশ্বাস করছে এই বছরই শিরোপা আসবে বেঙ্গালুরুর ঘরে। কোহলি হাসতে হাসতে জবাব দেন, “১৮ বছর লাগল বুঝতে? তাহলে ১৭, ১৬, ১৫ তে কী হল? তখন কী ভেবেছিল সবাই?” তার এই কৌতুকপূর্ণ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেয়, তিনি খুব বাস্তববাদী চিন্তাভাবনা করছেন এবং সংখ্যা নিয়ে অতিরিক্ত ভাবছেন না।
এই মরসুমে কোহলি নিজেও দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন। ছয়টি ম্যাচে তিনটি অর্ধশতক করে তিনি ইতিমধ্যেই ২৪৮ রান সংগ্রহ করেছেন। তাঁর ব্যাটিং গড় ৬২-এর ওপরে এবং স্ট্রাইক রেট ১৪৩-এর বেশি। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে তাঁর অর্ধশতকটি ছিল তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারের ৬৬তম হাফসেঞ্চুরি। এমন পারফরম্যান্স প্রমাণ করে, তিনি আবারও নিজের সেরা ছন্দে ফিরেছেন এবং দলের ব্যাটিং লাইনআপে স্থিতিশীলতা এনেছেন।
RCB-এর ব্যাটিং ইউনিট এবার অনেক বেশি পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। ওপেনিংয়ে কোহলি এবং ফিল সল্টের জুটি আস্থাজনক, যেখানে সল্টের আগ্রাসন এবং কোহলির স্ট্রোক খেলার ভারসাম্য খুব কার্যকর। মিডল অর্ডারে রজত পতিদার এবং শিবম দুবে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন। এছাড়া, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস এবং টিম ডেভিডের মতো খেলোয়াড়েরা শেষদিকে ঝড় তুলছেন। দলের বোলিং বিভাগও এখন অনেক বেশি পরিকল্পনামাফিক খেলছে। প্রতিটি ম্যাচে বোলাররা কৌশল অনুযায়ী বোলিং করছেন, যার ফলে প্রতিপক্ষকে সীমিত রাখা সম্ভব হচ্ছে।
তবুও, কোহলি জানেন যে আইপিএল একটি দীর্ঘ এবং প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট। শুরুর কয়েকটি ম্যাচে জয়লাভ করলেও সেটাই শিরোপা নিশ্চিত করে না। প্রত্যেকটি ম্যাচ আলাদা, এবং প্রত্যেকবারই নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। তাই তিনি ভক্তদের আবেগের পাশাপাশি বাস্তবতাকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। কোহলি চান না অতিরিক্ত প্রত্যাশা দলের উপর চাপ সৃষ্টি করুক।
এই মরসুমের অন্যতম ইতিবাচক দিক হলো কোহলির নেতৃত্বগুণ এবং মাঠে তাঁর পরিণত আচরণ। আগের তুলনায় অনেক বেশি ধৈর্যশীল ও কৌশলী দেখাচ্ছে তাঁকে। তিনি যেমন নিজের ব্যাটিং নিয়ে মনোযোগী, তেমনই দলের অন্যান্য সদস্যদের পারফরম্যান্সেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন। ড্রেসিং রুমে তাঁর উপস্থিতি দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে।
ভক্তদের সমর্থন বরাবরের মতো এবারও দলের সবচেয়ে বড় শক্তি। তবে কোহলি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শুধুমাত্র সংখ্যা বা কাকতালীয় মিলের উপর ভরসা করলে চলবে না। ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্স, পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ধারাবাহিকতা—এই তিনটি জিনিসই শিরোপা জয়ের মূল চাবিকাঠি। আর সেদিকেই এখন নজর রাখছে RCB এবং কোহলি নিজে।
শেষ পর্যন্ত, বিরাট কোহলির কথাবার্তা এবং মাঠে তাঁর আত্মবিশ্বাসই বোঝায়, তিনি কেবল শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন না, বরং সেটিকে বাস্তব করতে প্রতিটি মুহূর্তে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। সংখ্যা নয়, খেলা দিয়েই ইতিহাস লিখতে চান তিনি।