ভারত ও চীনের মধ্যে কয়েক বছর ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে এবার এক গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচিত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যাত্রীদের জন্য বন্ধ থাকা কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা আবার শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে এই বিষয়ে একটি বোঝাপড়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। করোনা অতিমারি এবং ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষের জেরে এই পবিত্র যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে, এবং এই যাত্রা পুনরায় চালুর খবরে আশার সঞ্চার হয়েছে ভক্তদের মধ্যে।
কৈলাস মানস সরোবর হিন্দু, বৌদ্ধ, ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান। বহু বছর ধরে ভারত থেকে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী তিব্বতের এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। এই যাত্রা এতদিন ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে, বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের উদ্যোগে, সীমিত সময়ের জন্য (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) চালু থাকত। দুটি রুটে যাত্রার সুযোগ থাকত – উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাস ও সিকিমের নাথুলা পাস। কিন্তু সীমান্তে দ্বন্দ্ব এবং কোভিড পরিস্থিতির কারণে এই যাত্রা গত চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
গত কয়েক মাসে ভারত-চীন সম্পর্কের কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত সামনে এসেছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং একটি আলাদা বৈঠকে বসেন। সেখানে সীমান্ত সমস্যা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র অনুযায়ী, ওই বৈঠকে কৈলাস যাত্রা পুনরায় চালু করার বিষয়টি উঠে আসে এবং তখন থেকেই আলোচনা এগোতে থাকে।
প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক স্তরে, দুই দেশই বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে পূর্ব লাদাখ, গালওয়ান, প্যাংগং ও ডেপস্যাং-এ স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়। এই প্রক্রিয়ার অগ্রগতির অংশ হিসেবেই ধর্মীয় তীর্থযাত্রা চালু করার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই যাত্রার আবার শুরু হওয়া কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, বরং কূটনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত চার বছরে, ভারত-চীন সম্পর্ক চরম অবনতির দিকে গিয়েছিল। সীমান্তে মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত সেনা, ছিল সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা। সেই প্রেক্ষিতে কৈলাস যাত্রা পুনরায় চালু হওয়া সম্পর্ক উন্নয়নের দিক থেকে এক বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
এই যাত্রা আবার চালু হলে ভারতের হাজার হাজার তীর্থযাত্রী উপকৃত হবেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তাঁদের স্বপ্ন পূরণ হবে। সেই সঙ্গে ভারত ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও এটি হবে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
সব মিলিয়ে, কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা আবার শুরু হওয়ার খবর ধর্মীয়, সামাজিক এবং কূটনৈতিকভাবে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে। দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস ও উত্তেজনার আবহে, এই সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে তা শুধু ভক্তদের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে বিবেচিত হবে।