সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
পদার্থের মৌলিক ধর্ম এবং বিশ্ব সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনের গবেষণার শরিক হয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন তিন বাঙালি। এই গবেষণার জন্যই ২০১২ সালে বহু প্রতীক্ষিত হিগস-বোসন কণা বা ঈশ্বর কণা আবিষ্কৃত হয়। বিশ্বের ৫০ টি দেশের প্রায় ৩ হাজার বিজ্ঞানী এই প্রকল্পের গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আর সৃষ্টির রহস্য ও পদার্থের মৌলিকত্ব নিয়ে সান প্রোজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই গবেষণায় অংশ নেওয়ার জন্য ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক ‘ব্রেক থ্রু’ পুরস্কার পেলেন পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক মানস মাইতি, অধ্যাপক শুভাশিস রায় এবং গবেষক ছাত্র সৌম্যদীপ বর্মন। গণিত পদার্থবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানে যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য গত ১ দশকেও বেশি সময় ধরে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেওয়া হয় বিভিন্ন দেশকে। এ বছরে পদার্থবিজ্ঞানে নতুন গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে যে তালিকা ঘোষিত হয়েছে তাতে বিশ্বভারতীর এই তিন বিজ্ঞানীর নাম রয়েছে। মানুষ মাইতি এবং শুভাশিস রায় বিশ্বভারতীর শিক্ষা ভবনের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং সৌম্যদীপ তাদেরই সহযোগী গবেষক ছাত্র। স্বাভাবিকভাবেই এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির শরিক বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। আর তাদের এই তিন কৃতী বিজ্ঞানীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে খুশি বিশ্বভারতী পরিবার। বিশ্বভারতী রূপাচার্য প্রবীর কুমার ঘোষ জানান, ” বিশ্বভারতী পক্ষ থেকে আমরা অধ্যাপক মাইতি ও তার দলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছি। নিঃসন্দেহে এই তিন বিজ্ঞানী বিশ্বের দরবারে বিশ্বভারতীর নাম উজ্জ্বল করেছেন যার জন্য আমরা সকলেই গর্বিত।” গতকাল বিকেলেই বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে অধ্যাপক মানুষ মাইতি অধ্যাপক শুভাশিস রায় এবং সৌম্যদীপ বর্মন কে সম্বর্ধিত করা হয়। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে অবশ্যই উচ্ছ্বাস ছেপে রাখেননি অধ্যাপক মানুষ মাইতি। তাঁর কথায়, ” এই আন্তর্জাতিক গবেষণা যুক্ত হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। দেশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। আশা করি এই ধরনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মৌলিক গবেষণায় ছাত্রছাত্রীদের আরও আগ্রহ বাড়াবে।”
প্রসঙ্গত এই ধরনের গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক পাঁচ বছরের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান করে থাকে। যদিও বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতীর উপাচার্যের দায়িত্বে থাকার সময় এই সান প্রজেক্টে অংশগ্রহণ বন্ধ করে দেন। তবুও দমে যাননি অধ্যাপক মাইতি ও তার দল। নিম্ন আদালত থেকে পড়ে কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত এ নিয়ে মামলার জল গড়ায়। প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে কলকাতা হাইকোর্টে তলবও করা হয়। পরে হাইকোর্টের রায় গবেষণার কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পান অধ্যাপক মানুষ মাইটি ও তার সহযোগীরা। গবেষণার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই অবশেষে এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তিন কৃতী বাঙালি বিজ্ঞানীর। যার শরিক অবশ্যই গুরুদেবের বিশ্বভারতী।
