রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্থা ইউনেস্কোর ‘মেমরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ ঠাই পেল প্রাচীন ভারতের শ্রীমদ্ভাগবত গীতা ও ভরতমুনির নাট্যশাস্ত্র। ইউনেস্কোর ‘মেমরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’ গোটা বিশ্বের প্রাচীন ঐতিহাসিক লেখ্য, পাণ্ডুলিপিকে স্বীকৃতি দেয়। যে সব পুস্তক প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সমাজকে প্রভাবিত করছে, সেই সব লেখ্যই ঠাঁই পায় রাষ্ট্রসংঘের এই রেজিস্টারে। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর রীতিমতো উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোশাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য এটি একটি গর্বের মুহূর্ত!”
কিন্তু ইউনেস্কোর ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’ আসলে কী? ইউনেস্কোর এই রেজিস্টার হল সেই তথ্যপঞ্জী যেখানে গোটা পৃথিবীর ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, পান্ডুলিপি ও দলিল যেগুলো যুগে যুগে মানব সমাজকে প্রভাবিত করে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির সুসংবাদ এক্স হ্যান্ডেলে দেশবাসীকে জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। রাষ্ট্রসংঘের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে তিনি লেখেন, “এই সিদ্ধান্ত ভারতের ঐতিহ্য ও পরম্পরার প্রতি সম্মান প্রদর্শন। শ্রীমদ্ভগবদ গীতা এবং ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্র এখন ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ। কালজয়ী এই রচনাগুলি সাহিত্যের চেয়েও বেশি কিছু। এগুলি দার্শনিক ও নান্দনিক ভিত্তি যা বিশ্বের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি, আমাদের চিন্তাধারা ও জীবনযাপনকে তুলে ধরেছে। এই নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের রেজিস্টারে আমাদের দেশের ১৪টি প্রাচীন পুস্তক ঠাঁই পেল।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সেই বার্তা সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরও লিখেছেন, “গীতা ও নাট্যশাস্ত্রের এই স্বীকৃতি আমাদের চিরন্তন জ্ঞান ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির বৈশ্বিক মূল্যায়ন। এই গ্রন্থগুলি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সভ্যতা ও চেতনাকে লালন করেছে। তাদের গভীর দর্শন আজও বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করছে।”
শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় ১৮টি অধ্যায়ে ৭০০টি শ্লোক রয়েছে, যা মহাভারতের ভীষ্মপর্বের (অধ্যায় ২৩-৪০) অন্তর্গত। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রাক্কালে হতাশাগ্রস্ত অর্জুনকে উদ্দীপ্ত করতে শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া উপদেশই এই গ্রন্থের মূল বিষয়। গীতা প্রাচীন ভারতীয় বৌদ্ধ, জৈন, চার্বাক ও বেদান্ত দর্শনের সমন্বয় করে একটি সার্বজনীন দার্শনিক গভীরতা উপস্থাপন করে। এর ব্যাপক প্রভাবের কারণে গীতাকে বহু ভাষায় অনূদিত করা হয়েছে এবং তা বিশ্বজুড়ে পঠিত হয়।
অন্যদিকে ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্র, যা খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে রচিত বলে ধরা হয়, বর্তমানে ভাণ্ডারকর ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে তা সংরক্ষিত। ৩৬,০০০ শ্লোকবিশিষ্ট এই গ্রন্থটি নাট্যবেদ বা গান্ধর্ববেদ নামেও পরিচিত। এটি নাট্য (নাটক), অভিনয়, রস, ভাব ও সংগীতের একটি বিস্তৃত কাঠামো প্রদান করে। ভারতীয় নাট্যকলা, কাব্যতত্ত্ব, নন্দনতত্ত্ব, নৃত্য ও সংগীতের ভিত্তি এই গ্রন্থ।
Leave a comment
Leave a comment