প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপানো শুল্ক নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও তার কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার ঝুঁকি নেই বলে জানিয়ে দিল ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা জানিয়েছেন অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় সব দেশকে অবশ্যই নিজেদের ঘর সামলানোর চেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।
শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে এক নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন যিনি তিনি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২ এপ্রিল ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। পরে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন তিনি। তবে এ সময় পাল্টা শুল্ক ন্যূনতম ১০ শতাংশ কার্যকর হবে। অনেক দেশই ট্রাম্পের এই নীতির বিরোধীতা করেছেন আবার অনেক দেশ মেনে চলার কথা বলেছেন।আগামী দিনে গোটা বিশ্বের ইকোনমির উপর এর কী প্রভাব পড়বে তা হিসেব করতে বসেছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। কেউ বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিই ধীরগতির হয়ে পড়বে।
আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ-এর প্রধান জেরোম পাওয়েল ট্রাম্পের বর্ধিত শুল্ক নিয়ে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন। তাঁর মতে যে রকম খামখেয়ালি ভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক এবং বাণিজ্য নীতিতে বদল আনছেন তার নজির মানব সভ্যতার কাছে নেই। ফলে কারও পক্ষেই অনুমান করাও সম্ভব হচ্ছে না যে এই শুল্ক কার্যকর করার ফল বিশ্বজুড়ে কী হতে চলেছে। তিনি বলেছেন, ‘যা মনে করা হচ্ছে, তার থেকেও অনেক বেশি প্রভাব পড়বে এই ট্যারিফের।’
অনেকে বলছেন ট্রাম্পের শুল্কনীতি কোনও দেশের জন্যই মঙ্গল ডেকে আনবে না। উপরন্তু সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হতে পারে। জেপি মর্গান বলছে, মিত্রদের ওপর থেকে বাড়তি শুল্ক স্থগিত হলেও বিশ্বজুড়ে মন্দার শঙ্কা এখনো ৬০ শতাংশ। তবে এবার অন্যকথা জানাল আইএমএফ।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল জানাচ্ছে “বাণিজ্য শুল্ক সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা রেকর্ড ছাড়িয়েছে, তবে বৈশ্বিক মন্দা হবে না”। বিশ্ব অর্থনীতির পূর্বাভাসে এই সংস্থা জানিয়েছে, “বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক শেয়ার বাজারের দাম কমেছে” এবং দেশগুলোর মধ্যে “আস্থার অভাব বেড়েছে” বলে সতর্ক করেছে। তবে, আই এম এফ মন্দার পূর্বাভাস না দিয়ে বরং বলেছে, “আমাদের নতুন বৃদ্ধির পূর্বাভাসে কিছুটা অবনমন দেখা যাবে, কিন্তু মন্দা নয়”।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ঘোষণার পর গোটা বিশ্বের শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে, যা এখনও পুনরুদ্ধার হয়নি। মার্কিন যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ১০০ কোম্পানির সূচক এফটিএসই ১০০ গত এক মাসের তুলনায় এখনও ৪.৬% নিচে রয়েছে। বুধবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সতর্ক করে দিয়েছে যে ট্রাম্পের শুল্কের কারণে এ বছর বৈশ্বিক বাণিজ্য কমতে পারে। এর আগে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও বলেছে যে বাণিজ্য সংঘাত বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় বিপদ তৈরি করেছে।
তবে, আইএমএফ তুলনামূলকভাবে আশাবাদী। সংস্থার প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বৃহস্পতিবার জানান যে বিশ্ব অর্থনীতি আমাদের হাতের নাগালেই আছে, এজন্য আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।তিনি বলেন যে এই অনিশ্চয়তার মুখে সব দেশেরই নিজেদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কঠোর পরিশ্রম করা উচিত। এছাড়াও, জর্জিয়েভা বলেন যে চিনকে তার সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে, যাতে মানুষ অতিরিক্ত সঞ্চয় না করে বরং ব্যয় করতে উৎসাহিত হয়। পাশাপাশি, মার্কিন সরকারকেও তার ঋণের বোঝা কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।
Leave a comment
Leave a comment