নিজেদের ভবিষ্যৎ কি?উত্তর পেতে আইনি পথের ভাবনা শিক্ষাকর্মীদের
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্যে স্কুল গুলিতে আপাতত শিক্ষক সমস্যা মেটায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রাজ্য সরকার। সাময়িক সমাধান মিলেছে চাকরিহারা শিক্ষকদেরও। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন স্কুল পরিচালনায়। এবার থেকে কি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ঘন্টা বাজাতে হবে? কন্যাশ্রী থেকে শয়ে শয়ে সার্টিফিকেট তৈরির কাজ, নবম শ্রেণী অথবা একাদশ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন এর কাজ, ফরম ফিলাপ, অডিট, পেনশন, সার্ভিস বুক, বাংলা শিক্ষা পোর্টাল, স্কলারশিপ অথবা স্কুলের যাবতীয় হিসাব রক্ষণ বা বেতন তালিকা তৈরি করা আরো অন্যান্য যাবতীয় কাজকর্মের দায়ভার কে নেবে? এখন এই ভাবনাতেই ঘুম ছুটেছে রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষের। কারণ যোগ্য অযোগ্যের ফারাক স্পষ্ট না হলেও আপাতত চাকরিহারা সব শিক্ষকরাই চলতি বছর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের আওতায় নেই যোগ্য শিক্ষাকর্মীরা। বিশেষ করে ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি যারা নিযুক্ত হয়েছিলেন তাদের চাকরি বহাল রাখার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কোনও মন্তব্য করেনি। কলকাতাসহ জেলায় জেলায় এই শিক্ষাকর্মীরা আপাতত বেকার। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাকর্মীর অভাবে রাজ্যের স্কুলগুলির পরিচালন ব্যবস্থা যে ভেঙে পড়বে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আর এখানেই বেধেছে বিপত্তি। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরিতে বহাল রাখা যাবে, নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে এবং চলতি বছরের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে। এই পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক চললেও স্কুলের ব্যবস্থাপনা বা পঠন-পাঠনের বাইরে যে বড় অংশের কাজ সেই কাজের কর্মী কিভাবে মিলবে? ঘন্টা বাজানো থেকে দপ্তরীর কাজ বা হিসেবনিকেশ রাখা, কন্যাশ্রী সবুজ সাথী থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সার্টিফিকেশন বা হিসাবরক্ষণের কাজ করবে কারা? এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থায়।
উল্লেখযোগ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনামা নিয়ে মুদ্রার একপিঠের বিস্তর আলোচনা হলেও মুদ্রার অন্য পিঠের অন্ধকার দিক নিয়ে আলোচনা নেই রাজ্যস্তরে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ‘ব্যাক অফিস’ হিসেবে যারা কাজ করেন তারাই ব্যবস্থাপনার মূল মেরুদণ্ড। স্কুলশিক্ষা স্তরে তারাই হলেন শিক্ষাকর্মী যাদেরকে ‘অশিক্ষক’ হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়। ২০১৬ SLST-র যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা কি সুবিচার পেয়েছেন? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য শিক্ষা ব্যবস্থার অন্দরমহলে। আর এই বঞ্চিত যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের দাবি নিয়ে এবার সোচ্চার পশ্চিমবঙ্গ স্কুল ও মাদ্রাসা ক্লার্কস অ্যাসোসিয়েশন। ২০১৬ সালের এই যোগ্য শিক্ষা কর্মীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার হতে কলকাতা প্রেস ক্লাবে আজ সাংবাদিক সম্মেলনও করবেন অ্যাসোসিয়েশনের পদাধিকারীরা। অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য তথা ২০১২ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শিক্ষাকর্মী হিসেবে নিযুক্ত সৌম্য মিত্র আক্ষেপ করেছেন “শিক্ষা কর্মীদের কোনো জব চার্ট নেই, স্যালারি স্কেল নেই। সমস্ত সরকারি কর্মীদের ডিএ বাড়লে যেমন তাদের মূল বেতন অনেকটা বাড়ে কিন্তু শিক্ষা কর্মীদের ডিএ বাড়লে
৭০০-৮০০ টাকার বেশি যুক্ত হয় না। অথচ এই শিক্ষা কর্মীরাই স্কুল পরিচালন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। শিক্ষা কর্মীদের মধ্যেও পি এইচ ডি করা ক্লার্ক রয়েছেন। কিন্তু তারাও যে পোস্টে জয়েন করেছেন সেই পোস্টেই অবসান নেবেন। কোন উন্নতি হয় না।” একটি স্কুলের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত থেকেও শিক্ষকদের সঙ্গে অ-শিক্ষক বলে যারা পরিচিত তাদের এই বৈষম্য কেন? প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা নিয়েও। ” আমরা বহুবার এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকের সঙ্গেই কথা বলতে চেয়েছি, দেখা করতে চেয়েছি। কিন্তু কোন সাড়া পাইনি। আসলে অরাজনৈতিক সংগঠন বলেই কেউ পাত্তা দেয়নি।” আক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গ স্কুল ও মাদ্রাসা ক্লার্কস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য সৌম্য মিত্রের। এই সংগঠনে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার শিক্ষাকর্মী রয়েছেন যাদের মধ্যে বহু সংখ্যায় আছেন ২০১৬ SLST বঞ্চিত শিক্ষাকর্মীরাও। যদি তাদের ডাকে কেউ সাড়া না দেয় অথবা বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে তাহলে নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তা ভাবনা রয়েছে সংগঠনের বলেও জানানো হয়েছে।