এবছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজিত হবে বলে ফের জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনসের (এএনএফআরইএল) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা জানান। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আনফ্রেল প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।আনফ্রেল হলো এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর একটি আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক। এই সংস্থা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং মানুষের অংশগ্রহণকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে আসছে।
এক্ষেত্রে নির্বাচন যখনই হোক না কেন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে তার অঙ্গিকার জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনসএর প্রতিনিধি দলকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এই নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা এবং দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার জন্য একটি মাইলফলক হবে।’
তবে অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বললেও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল।বাংলাদেশে নির্বাচন হয় সাধারণত শীতকালে বা নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই সময়ের মধ্যে।ডিসেম্বর বা জানুয়ারির পরের মাসগুলোতে রমজান, ঈদ কিংবা বর্ষা মৌসুমে নির্বাচন অনুষ্ঠান কতটা সম্ভব-এই প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বেশিরভাগ দল।কারণ গরমকালে নির্বাচন হলে আবহাওয়া অনেকটাই প্রতিকূলে থাকে।
অন্যদিকে ছাত্রদের দল এনসিপি প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বর থেকে জুন এই সময়সীমাকে সমর্থন করলেও সংস্কার এবং বিচার ছাড়া নির্বাচনের বিরোধী।অন্তর্বর্তী সরকার চাইছে আগামী দু- মাসের মধ্যেই সংস্কারের এজেন্ডা চূড়ান্ত করে দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে।কিন্তু এখন এইসব নিয়ে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই বলে দাবি করছে বিএনপি।তারা ডিসেম্বরেই নির্বাচন দাবি করেছে। তবে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচন পেছানোর বা বিলম্ব করার কোনো ইচ্ছা নেই সরকারের।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনও সংস্কারের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। শনিবার ঢাকায় দলের বর্ধিত সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জি এম কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তাঁর মতে, সংস্কার হল নির্বাচন পিছোনোর বাহানা। দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে সরকার যে সংস্কার করতে চাইছে, তা কোনো দিনই কার্যকর হবে না।
প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী জি এম কাদের সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারকেই বৈধ সরকার বলা হয়। এই সরকার নির্বাচিত নয়। কিন্তু হাইকোর্ট এই সরকারকে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা মেনে নিয়েছি। এ সরকার মাঝামাঝি হয়ে গেছে। এই সরকার যে সংস্কারই করুক, তা নির্বাচিত সংসদে পাস করতে হবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নেই।’
ডেইলি স্টার তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে যে আনফ্রেল প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোজালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, ক্যাম্পেইন ও অ্যাডভোকেসির সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্দু আবিরত্ন, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা অ্যামি।
Leave a comment
Leave a comment