পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া একটি রিট পিটিশনের শুনানিতে শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাড়াহুড়ো করে দায়ের করা এই ধরনের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। প্রস্তুতির অভাব এবং যুক্তিসঙ্গত উপস্থাপনার অভাবে আদালত দুই আবেদনকারী আইনজীবীকে আবেদন প্রত্যাহার করতে নির্দেশ দেয়। তবে আদালত এটিও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যদি যথাযথ তথ্য, নথিপত্র এবং যুক্তি সহ আবেদন জমা দেওয়া হয়, তাহলে তা বিবেচনা করা যেতে পারে।
এই আবেদনের পেছনে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের এক প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো এক ব্যক্তি এবং আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন, যিনি ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগের আবেদন করেছিলেন। তবে শীর্ষ আদালত এই মুহূর্তে এই মামলাগুলির শুনানি না করে তা বাতিল করে দেয়।
এদিকে, মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ অঞ্চলে সহিংসতার ঘটনার পরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। টানা দশ দিন বন্ধ থাকার পর আজ অবশেষে স্কুলগুলি খুলেছে। মালদার যে পরিবারগুলো সহিংসতার ভয়ে আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছিল, তাদেরকে মুর্শিদাবাদে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এসপি আনন্দ রায় জানিয়েছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অধিকাংশ পরিবারই বাড়ি ফিরে গেছেন। ওয়াকফ আইন সংশোধনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে সৃষ্ট সহিংসতায় ইতিমধ্যে ১৫৩টি মামলা দায়ের হয়েছে এবং ২৯২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে ১১ এপ্রিল থেকে। ওইদিন গুলিবিদ্ধ হয় এক কিশোর, যাকে পরে মৃত ঘোষণা করা হয়। ১২ এপ্রিল সামশেরগঞ্জে এক পিতা-পুত্রকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে স্থানীয় বাসিন্দারা দেহ উদ্ধারে বাধা দেয়। মুখ্যমন্ত্রী নিহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেও, তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে বিএসএফ শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ধুলিয়ান পুরসভা এলাকাও এই হিংসার থেকে মুক্ত ছিল না। ১২ এপ্রিল সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং একটি শপিং মলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে। একই দিনে স্থানীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলামের দাদা আলির বাড়ি, এমনকী বিধায়ক নিজেও হেনস্থার শিকার হন বলে জানা গেছে। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমানের অফিসেও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
মোটকথা, এই সহিংস ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ থাকলেও, সুপ্রিম কোর্ট এখনই রাষ্ট্রপতি শাসনের মতো গুরুতর পদক্ষেপের পক্ষে নয়। বরং, আদালতের বার্তা পরিষ্কার—সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ও সাংবিধানিক ভিত্তি ছাড়া এমন আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। তবে ভবিষ্যতে যদি যথাযথ নথি ও তদন্ত-প্রমাণসহ আবেদন করা হয়, তাহলে তা শুনানির সুযোগ পেতে পারে।