আদালত অবমাননার নয়া ‘খাঁড়া’ স্নায়ুর চাপ বাড়িয়েছে এসএসসির
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
“রাস্তাই পথ দেখাবে”। মুখ্যমন্ত্রীর এই আপ্তবাক্যই ফের রাতভর রাস্তায় নামিয়েছি চাকরিহারাদের। স্মৃতি ফিরিয়েছে আরজি কর আন্দোলনের। আর একদিকে চাকরিহারাদের আন্দোলন ও সুপ্রিম নির্দেশ অন্যদিকে আদালত অবমাননা নিয়ে হাইকোর্টের নয়া নির্দেশ, এই দুইয়ের জাঁতাকলে স্নায়ুর চাপ বাড়ছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের।
২০১৬ এসএসসি প্যানেল বাতিল মামলায় সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখার পাশাপাশি যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা তৈরির দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট করে দেয়। অযোগ্য বা দুর্নীতিগ্রস্ত বলে যারা চিহ্নিত তাদের বেতন বন্ধের পাশাপাশি বেতন ফেরত এর নির্দেশও দেয় শীর্ষ আদালত। একই সঙ্গে হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ যোগ্য অযোগ্য পৃথকীকরণের পাশাপাশি গাজিয়াবাদ থেকে সিবিআই এর উদ্ধার করা হার্ডডিস্কের সমস্ত ওএমআর প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টও। অথচ সেই নির্দেশকে এখনো পর্যন্ত মান্যতা দেয়নি রাজ্য সরকার তথা স্কুল সার্ভিস কমিশন। আর এখানেই হয়েছে ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’। আদালত অবমাননার মুখে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন। গতকালই হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ ৪৮ ঘন্টা সময় দিয়েছে সরকার পক্ষকে। যার মেয়াদ আগামীকাল পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রীর প্রতিশ্রুত যোগ্য ও অযোগ্য চাকরি হারাদের আলাদা করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে সেই তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে বিপাকে সরকারপক্ষ। গাজিয়াবাদ থেকে সিবিআই কর্তা পঙ্কজ বনশলের নেতৃত্বে যে হার্ডডিস্ক উদ্ধার হয়েছিল সেখানেই লুকিয়ে আছে ২০১৬ এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রকৃত ওএমআর। এর আগে হাইকোর্টে শুনানি চলাকালীন এবং পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টেও রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তাদের কাছে প্রকৃত ওএমআর-এর কোন তথ্য নেই। দু বছরের বেশি এই তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা হয় না এই যুক্তি দেখিয়ে আদালতকে এসএসসি জানায় সিবিআই এর উদ্ধার করা ওএমআর প্রামাণ্য তথ্য হিসেবে ধরা যেতে পারে। আদালত সে কারণেই গাজিয়াবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ডডিস্ক-এ ঢাকা ওএমআর জনসমক্ষে আনার নির্দেশ দেয়। যদিও সেই কাজটি সযত্নে এড়িয়ে নিজেদের উদ্যোগে যোগ্য অযোগ্য তালিকা তৈরি করে কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশের উদ্যোগ নেয় রাজ্য শিক্ষা দপ্তর ও এসএসসি। সেই মোতাবেক চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে বৈঠক করে ২১ এপ্রিল ডেট লাইন দেন রাজ্যে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, কিসের ভিত্তিতে এসএসসির ওয়েবসাইটে যে যোগ্য চাকরি হারাদের চিহ্নিত করা হবে? যারা অযোগ্য তাদের বিরুদ্ধেই বা অযোগ্যতার তথ্য-প্রমাণ কি? যখন এসএসসি আদালতে নিজেই জানিয়েছে যে প্রকৃত ও এম আর তাদের কাছে নেই এবং যোগ্য ও অযোগ্যদের বাছাই করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় তখন কিসের ভিত্তিতে এই যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা তৈরি করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে আদালতে। শুধু তাই নয় সুচতুরভাবে হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ গত বছরের ২২ এপ্রিল যা যা নির্দেশ দিয়েছিল( যে নির্দেশগুলি সুপ্রিমকোর্ট ও বহাল রাখে) সেগুলোকে এড়িয়ে এই তালিকা প্রস্তুতির কৌশল নিয়েছে রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন বলেও মনে করছেন শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে ওয়েবসাইটে তালিকা আপলোড করার শেষ লগ্নে এসে এস এস সি জানায় তৃতীয় কাউন্সেলিং পর্যন্ত আপাতত যোগ্য ও অযোগ্যদের বাছাই। তালিকা আপলোড করা হবে। আর এখানেই প্রশ্ন, তবে কি তৃতীয় কাউন্সেলিং এর পর থেকেই দুর্নীতির চাবিকাঠি ঘোরানো শুরু হয়? কাউন্সেলিং এর নামে বাকি চারটি পর্বে কি শুধুই স্টেপ জাম্প? ওএমআর সিটে কাটাকুটির খেলা? গাজিয়াবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ডডিস্ক কে কি সেই রহস্যই লুকিয়ে রয়েছে? যে হার্ডডিস্ক এখন ‘শাঁখের করাত’ হয়েছে রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের। ওএমআর কারচুপি প্রকাশ্যে এলে ফের শাস্তির খাঁড়া ঝুলতে পারে সরকারি কর্তাব্যক্তিদের। ২৬ এর নির্বাচনের আগে ফের একবার রাজনৈতিক বিলম্ব না তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে সবকিছুকে মাথায় রেখেই এখন ‘অ্যাড্রিনালিন’ উর্ধ্বমুখী স্কুল সার্ভিস কমিশনের।