অভিজিৎ বসু
রাত বাড়ছে। এখনও যোগ্য আর অযোগ্যদের তালিকা বের করা যায়নি। এস এস সি দফতরের সামনের রাস্তায় হাজার হাজার আন্দোলনকারী শুয়ে বসে রাত কাটাচ্ছেন। একটা ছবি সমাজ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক থেকে ওদিক। সেই রাস্তায় শুয়ে থাকা শিক্ষকদের ছবি। যে ছবি দেখে মনে হলো যেদিকে তাকাই শুধু সব্বাই তো শিক্ষক আর শিক্ষকের ভীড়। এই শহরের এক কোণে রাস্তায় নেমে পড়েছেন তাঁরা সবাই। রাস্তা দখল করে শুয়ে আছেন, বসে আছেন তাঁরা সবাই। শুধু একটাই দাবি তাঁদের যোগ্য আর অযোগ্যদের তালিকা বাছাই করা হোক। এই ছবিতে সব্বাই যারা পথে বসেছে তারা শিক্ষক। অর্থাৎ পথে বসে আছে গোটা রাজ্যের একাধিক স্কুল। স্কুলগুলো পথে বসে আছে মানে ছাত্র ছাত্রীদেরও পথে বসানো হলো। ২৬,০০০ শিক্ষক প্রতি ৫ জন পরিবারের সদস্য পথে বসেছে। মানে প্রায় এক কোটি মানুষ পথে বসে আছেন। সত্যিই অসাধারণ এই রাজ্যের সরকার এর শিক্ষা নিয়ে শিক্ষকদের চাকরি নিয়ে ব্যবসা করা। যে ব্যবসা করতে হাত কাঁপেনি একবারও। যে ব্যবসা করতে বুক কাঁপেনি একবার। মনে হয়নি রাজ্যের স্কুলে স্কুলে শিক্ষা দেন যাঁরা তাদের নিয়ে এমন ব্যবসা করা উচিৎ নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। গা গুলিয়ে বমি পাচ্ছে আমার। কিছু টাকা রোজগার করতে গিয়ে যা নয় তাই করা। যোগ্যদের মাঝে সুচারু ভাবে অযোগ্যদের ঢুকিয়ে দেওয়া। আর তার জন্য গ্রামে গঞ্জে শহরে বেপরোয়া হয়ে এজেন্ট নিয়োগ করা। শিক্ষকের চাকরি বেচার এজেন্ট একদম ঠিক পাড়ায় পাড়ায় এল আই সি এজেন্ট এর মত। আর তার ফল
করুণাময়ীর রাস্তায় বসে আছেন আমাদের শিক্ষকরা। যাঁরা আমাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দিয়ে স্কুলে পড়িয়ে পাশ করিয়ে ডিগ্রি প্রদান করে মানুষ করে দেবেন। সেই শিক্ষার কারিগরদের নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। যা আজ সবার সামনে চলে এসেছে দিনের আলোয়। আর তার জন্য জেল যাত্রা হয়েছে এই সরকারের দাপুটে মন্ত্রীর। লুটোপুটি খাচ্ছে এই রাজ্যের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যে। যেখানে একটা কালো দাগ লেগে গেছে। সবাই জেনে গেছে যে এই রাজ্যে শিক্ষক এর চাকরি কে বেচা হয়। যাতে জড়িত থাকেন ছোটো, বড়ো, মেজো, সেজো সব নেতারা মন্ত্রীরা আর এজেন্টরা। যাঁরা শুধু পরিকল্পনা করে টাকা কামাতে রাস্তায় নেমে পড়েন আগুপিছু না ভেবেই। চাকরি বেচে দেন মেধার বিনিময়ে নয় শুধুই টাকার বিনিময়ে। সত্যিই অসাধারণ এই মা মাটি আর মানুষের সরকার। যে সাদা শাড়ি আর হাওয়াই চটি পড়া সরকার নিয়ে একদিন গর্ব অনুভব করতাম আম আদমি এই সাধারণ মানুষ হিসেবে এই বাংলার মানুষ। আজ কেমন যেন বদলে যাওয়া এই সরকারকে দেখে মনে হয় ক্ষমতা, বিপুল অর্থ আর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যোগ্য আর অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ না করে একটা ভালো ব্যবসা ফেঁদে বসা। কিছু মানুষ রাস্তায় বসে আছেন, প্রতিবাদে মুখর হচ্ছেন। রাস্তার ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা হচ্ছে,
এপাং ওপাং ঝপাং।
আমরা সবাই ড্যাং ড্যাং।
চলো দেখি কোলাব্যাঙ।
প্রজাতির আছে কি ঠ্যাং?
এই জাতির ঠ্যাং আছে কিনা জানি না তবে কবি অনেকদিন হলো এই জাতির মেরুদন্ডটা ভেঙে ঠ্যাং ভেঙে, ডব্বা ডব্বা রব্বা করে দিয়েছেন একেবারেই। ধুলোয় মিশে গেছে আমাদের সব কিছুই। সত্যিই অসাধারণ এই লক্ষ্মী ভাণ্ডার এর সরকার। মা সরস্বতী কে বেচে দিয়ে মা লক্ষীর আরাধনা।