নরেন্দ্র মোদীর সৌদি আরব সফর ঘিরে কূটনৈতিক মহলে বাড়ছে কৌতূহল। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দু’দিনের এই সফর শুধু আনুষ্ঠানিক সৌজন্য নয়, বরং তেলনীতি ও বিনিয়োগভিত্তিক এক গুরুত্বপূর্ণ দিকচিহ্ন হয়ে উঠতে চলেছে। অপরিশোধিত তেল আমদানি ও ভারতের তৈল শোধনাগারে সৌদি লগ্নি—এই দুই ইস্যু ঘিরেই সফরের প্রধান আলাপচারিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে সৌদি আরব ভারতের অন্যতম প্রধান অপরিশোধিত তেল রফতানিকারী দেশ। সাউথ ব্লকের মতে, মোদী সরকারের সময়ে পশ্চিম এশিয়ায় ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে। সূত্রের দাবি, চলতি সফরের সময়ে রিয়াধ ভারতকে তেলের রফতানিতে কিছু ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব আনতে পারে। তাদের লক্ষ্য, ভারতের আমদানি বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করা। মূলত চীনের অর্থনীতি ধাক্কা খাওয়ায় এবং বৈদ্যুতিন যানবাহনের চাহিদা বৃদ্ধিতে সৌদির তেল রফতানি ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে তুলতেই ভারত এখন রিয়াধের কৌশলগত ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে।
প্রসঙ্গত, পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের তিনটি বড় তৈল শোধনাগারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি আরব। এতে ভারত যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হবে, তেমনি সৌদি আরবেরও কৌশলগত অবস্থান মজবুত হবে এই অঞ্চলে। কেবল তেল নয়, সৌদি আরব থেকে ভারতে নানা ধরনের রসায়নিক পণ্য, সার ও যৌগও আমদানি হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই আমদানি প্রবণতায় পড়েছে ভাঁটা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সৌদি পণ্য আমদানিতে ২৪.৩ শতাংশের বড় পতন দেখা গেছে, যার মূল কারণ খনিজ জ্বালানি ও অপরিশোধিত তেলের আমদানি কমে যাওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হ্রাসের পেছনে রয়েছে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর রাশিয়া কম দামে অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করে ভারতীয় বাজারে সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারীর জায়গা দখল করে নেয়। ইরাক ও সৌদি আরব পিছিয়ে পড়ে সেই দৌড়ে। ফলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে এবং বাজার ধরে রাখতে সৌদি আরবকে এখন কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আরও সক্রিয় হতে হচ্ছে।
মোদীর এই সফর তাই নিছক দ্বিপাক্ষিক সৌজন্যের রুটিন নয়। বরং তেল-কূটনীতি, কৌশলগত লগ্নি এবং পশ্চিম এশিয়ায় ভারতের অবস্থান পুনর্গঠনের বড় সুযোগ হিসেবেই দেখছে নয়াদিল্লি ও রিয়াধ উভয়ই। সৌদি আরবের পক্ষে এটি একটি বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ, যেখানে তারা তাদের অর্থনৈতিক চাপ হালকা করতে ভারতীয় বাজারকে আরও বেশি করে কাছে টানতে চাইছে। অন্যদিকে ভারত, বৈচিত্র্যময় আমদানি উৎস ও কৌশলগত মিত্রতার লক্ষ্যে এই ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগাতে চাইছে।