জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার পর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা ঠিক করতে জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এই বৈঠকে বসেন দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কমিটি —ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি।বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সকালে শ্রীনগরে ছিলেন, তিনি দিল্লি ফিরে সোজা বৈঠকে যোগ দেন।সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে এই বৈঠক।
বুধবার সকালে সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে এসেই মোদী বিমানবন্দরে জরুরী বৈঠকে অংশ নেন। সেই বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রি। প্রধানমন্ত্রী জানান, “পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করছি। যাঁরা আপনজন হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। এই বর্বর হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান আরও দৃঢ় হবে।”
গতকাল হামলার পরেই এক আবেগঘন বার্তায় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, “এই জঘন্য ঘটনার পিছনে যারা রয়েছে, তাদের রেহাই দেওয়া হবে না… তাদের দুষ্কৃতমূলক উদ্দেশ্য কখনও সফল হবে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অটল।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ বুধবার কাশ্মীর উপত্যকায় গিয়ে তিনি ভরসা দিয়েছেন, এই নৃশংস জঙ্গি হামলায় দোষীরা কেউ রেহাই পাবে না। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও বুধবার পৃথক ভাবে একটি বৈঠক করেন অজিত ডোভালের সঙ্গে। ওই বৈঠকে ছিলেন বায়ুসেনার এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহ এবং অন্য আধিকারিকেরা। রাজনাথ সিং ইতিমধ্যেই কড়া বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, এই হামলার উপযুক্ত ও দ্রুত জবাব দেওয়া হবে। পাকিস্তানের নাম না করেই তিনি বলেন, “আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে ভারত সরকার প্রয়োজনীয় এবং উপযুক্ত সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কেবল যারা এই হামলা চালিয়েছে তাদেরই নয়, যারা নেপথ্যে থেকে ষড়যন্ত্র করেছে, তাদেরও আমরা খুঁজে বের করব।” প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথও বুধবার পৃথক ভাবে একটি বৈঠক করেছেন ডোভালের সঙ্গে। ওই বৈঠকে ছিলেন বায়ুসেনার এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহ এবং অন্য আধিকারিকেরা।
মঙ্গলবার কাশ্মীরের বিখ্যাত পর্যটনস্থল পাহেলগাঁওয়ের বাইসারান উপত্যকায় আচমকা গুলি চালায় সন্ত্রাসবাদীরা। পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে মাথায় গুলি করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১৪টি রাজ্যের পর্যটক এবং দু’জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন।হামলায় মৃত্যু হয়েছে২৫ জনের,আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটি কাশ্মীর উপত্যকার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হামলা।এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ যা পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই- তৈবার একটি ছায়া সংগঠন। হামলার পরে গোটা দেশে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর স্পষ্ট জানিয়েছেন, “আপনি যদি সীমান্ত পেরিয়ে এসে কিছু করেন, তা সে আন্তর্জাতিক সীমান্তই হোক বা এলওসি—আমরা আপনাকে খুঁজে বের করব, এবং উপযুক্ত জবাব দেব।” এর আগেও উরি ও পুলওয়ামা হামলার পরে ভারত যথাক্রমে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও এয়ার স্ট্রাইক চালিয়ে জবাব দিয়েছে।