কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর হামলার পর গোটা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে শোক, ক্ষোভ আর আতঙ্কের ছায়া। নির্বিচারে গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন নিরীহ পর্যটক। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলার আগে পরিচয় যাচাই করা হচ্ছিল, আলাদা করে হিন্দুদের চিহ্নিত করে টার্গেট করা হচ্ছিল। যারা কোনওভাবে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, কলমা পড়তে বলা হয়েছিল জীবন বাঁচানোর শর্ত হিসেবে। অসমের এক বাঙালি অধ্যাপক হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও কলমা পাঠ করায় রক্ষা পান, কিন্তু সবার ভাগ্যে সেই আশীর্বাদ জোটেনি।
এই ভয়াবহ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন বলিউড অভিনেত্রী পায়েল ঘোষ। কাশ্মীর ভ্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন তিনি, আর সেই কথাই অকপটে শেয়ার করেন এক পাকিস্তানি অভিনেতা বন্ধুর সাথে। সেই বন্ধুই পরামর্শ দেন, কাশ্মীরে যাওয়ার আগে কলমা শিখে নিতে হবে, না হলে ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। এমন মন্তব্য শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান পায়েল। যাঁর হৃদয়ে তখনও পহেলগাঁওয়ের নিষ্ঠুরতার রক্তাক্ত ছবি টাটকা, সেখানে এমন এক হালকা-মেজাজের পরামর্শ তাঁকে রীতিমতো ক্ষুব্ধ করে তোলে। নিজের দেশেই যখন নাগরিকেরা নিরাপদ নন, তখন সেখানে ভ্রমণের সাহস রাখা যে কতটা কঠিন, তা অকপট স্বীকার করেন অভিনেত্রী।
পায়েল ঘোষের হতাশা ছিল দ্বিমুখী। একদিকে নিজের দেশের মাটিতে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে খুনোখুনির লজ্জাজনক বাস্তবতা, অন্যদিকে পাকিস্তানি বন্ধুর এমন মন্তব্য, যা গোটা বিষয়টিকে যেন আরও বিদ্রূপাত্মক করে তুলেছে। নিজের ক্ষোভ চেপে না রেখে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পাকিস্তানিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখাটাই তাঁর বড় ভুল ছিল। তাঁর কথায়, কাশ্মীরে যাওয়ার ইচ্ছে এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পহেলগাঁও হামলা ছিল অত্যন্ত সুচিন্তিত এবং সুপরিকল্পিত। হামলাকারীরা জানত, সেনা বা পুলিশের উপস্থিতি সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগবে। সেই সুযোগেই তারা নিরীহ পর্যটকদের টার্গেট করে আঘাত হানে। ধর্মীয় পরিচয় বেছে বেছে হত্যার অভিযোগ গোটা দেশের বুকে গভীর ক্ষতের মতো দাগ কেটেছে।
কাশ্মীরের এই ঘটনা আর পায়েল ঘোষের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে আজকের বাস্তবতা একেবারেই অস্বস্তিকর। যখন বন্ধুত্বের নামে কলমা শেখার নিদান আসে, যখন ধর্মীয় পরিচয় হয়ে ওঠে জীবন-মৃত্যুর মানদণ্ড, তখন সত্যিই প্রশ্ন ওঠে — আমাদের সমাজ ঠিক কোন পথে হাঁটছে?