আগামীকাল মহাযজ্ঞ ও মঙ্গলবার প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
রাত পোহালেই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে রাজসূয় যজ্ঞ। মঙ্গলবার অক্ষয় তৃতীয়ার শুভলগ্নে সমুদ্র সৈকত দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও উদ্বোধন। এই উপলক্ষে সুদৃশ্য জগন্নাথ মন্দিরসহ সমুদ্র সৈকত সেজে উঠেছে ‘আলোকের ঝর্ণাধারায়’। গোটা সমুদ্রসৈকত সেজে উঠেছে বিশ্বখ্যাত চন্দননগরের আলোকমালায়। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন হোক বা আইপিএলের মহারণ কিম্বা ইউনেস্কো হেরিটেজ কলকাতা দূর্গা পুজো সবেতেই যেমন চন্দননগরের আলোকমালা উৎসবের আমেজে বাড়তি সৌন্দর্য যোগায় ঠিক সেভাবেই রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম পুরীর জগন্নাথ ধামের আদলে তৈরি জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন কর্মসূচির শোভা বাড়িয়েছে চন্দননগরের আলোকসজ্জা। গোটা সমুদ্র সৈকত জুড়ে নানা রকমের আলোক ছটায় রঙিন হয়েছে সমুদ্রও। কি নেই সেই আলোকমালায়? জগন্নাথ দেব তো আছেনই, সঙ্গে বলভদ্র ও সুভদ্রা। নতুন মন্দিরের আদলে তৈরি আলোকসজ্জা বাড়তি মনের খোরাক মেটাবে দর্শকদের। গোটা মন্দির প্রাঙ্গন এবং মন্দিরের অঙ্গসজ্জাতে ও চন্দননগরের আলোক শিল্পীদের উদ্ভাবনী শক্তির ছোঁয়া রয়েছে। নতুন নতুন আলোর ছটা, মন্দির চত্বর ও দালানের বর্ণময় অঙ্গসজ্জা আলাদা মাধুর্য তৈরি করেছে দিঘার এই জগন্নাথ মন্দিরে। স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য উৎসব অঙ্গনের মতোই দিঘার সমুদ্র সৈকত জুড়ে এই আলোকসজ্জা দেখার উৎসাহ বেড়েছে কাল থেকেই। চন্দননগরের আলোক শিল্পীরা জানিয়েছেন, দীঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরীর পরিকল্পনার কাজ শেষ হতেই এই আলোকসজ্জা তৈরীর বরাত দেয় রাজ্য সরকার। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে আলোক শিল্পীদের। একাধিক আলোকচিত্র সংস্থাকে দায়িত্ব ফাঁক করে দেওয়া হয়েছে এই জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী পর্বের আলোকসজ্জায়। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন নিজেই চন্দননগরের বিধায়ক। স্বাভাবিকভাবেই এই গোটা ব্যবস্থাপনার মূলসূত্র তার হাত ধরেই। মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন জানিয়েছেন ” চন্দননগরের আলোক শিল্পের বিকল্প গোটা বিশ্বে বিরল। আর রাজ্যে যখন একটা গৌরবময় মুহূর্ত আস্তে চলেছে সেখানে চন্দননগরের আলোক শিখা জ্বলবে না সেটা ভাবা যায় না। সে কথা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগাম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে দীঘার এই জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে আলোক শয্যায় ভরিয়ে দেওয়া হবে গোটা সমুদ্র সৈকতকে। মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক সেই ভাবেই চন্দননগরের আলোকে শিল্পীরা, গোটা সমুদ্র সৈকতকে তথা জগন্নাথ মন্দিরকে মনোমুগ্ধকর আলোয় ভরিয়ে দিয়েছেন।”
উল্লেখযোগ্য, মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে আগামীকালই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে রীতি মেনে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে। যজ্ঞের মূল পুরোহিত হবেন পুরীর জগন্নাথ ধামের রাজেশ দ্বৈতাপতি। কাল দিনভর যোগ্য ও রীতিমেনে পূজা অর্চনা চলবে জগন্নাথ মন্দিরে। মঙ্গলবার প্রথমে এই মন্দিরে জগন্নাথ দেবের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন রাজেশ দ্বৈতাপতি ও সহকারি সেবাইতরা। আগামীকালের যজ্ঞ- পূজা অর্চনা থেকে প্রাণপ্রতিষ্ঠায় উপস্থিত থাকবেন ইসকনসহ সর্ব ধর্মের প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রার প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারদঘাটন ও উদ্বোধনী পর্ব। উদ্বোধন করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামীকাল থেকেই জগন্নাথ মন্দির অঙ্গনে চলবে নানা সাংস্কৃতিক ও ভক্তিমূলক অনুষ্ঠান। আর এই জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে ইতিমধ্যেই সৈকত শহরে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। প্রায় সাড়ে ১২ হাজারের মত মানুষ উদ্বোধনী কর্মসূচিতে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় উপস্থিত থাকবেন বলে ধরে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিয়েছে রাজ্য সরকার। যেহেতু এই জগন্নাথ মন্দির নিয়ে রাজ্য বাসীর উন্মাদনা তুঙ্গে তাই উদ্বোধনী স্থলে মানুষের ভিড় কমিয়ে গোটা রাজ্যে উদ্বোধনী কর্মসূচিকে ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী রাজ্য সরকার। সেজন্য প্রতি ব্লকে ব্লকে জায়ান্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে দুদিন ধরে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী পর্ব দেখানোর জন্য সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী পর্বে যাতে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন থাকে সেজন্য বাড়তি সতর্কতা। নিয়েছে রাজ্য পুলিশ। এই জগন্নাথ মন্দিরের নিয়মিত নিরাপত্তা ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজে গতি আনতে আলাদা করে ১০০ সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। সব মিলিয়ে আলোয় ভুবন ভরিয়ে দেওয়া চন্দননগরের আলোকসজ্জা ও ভক্তিবাদের মিশেলে এক আদর্শ ধর্মক্ষেত্র তৈরি হতে চলেছে দিঘার এই জগন্নাথ মন্দির।