কলকাতার উপকণ্ঠে বসে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের নাম ভাঙিয়ে পাসপোর্ট জালিয়াতির চক্র চালাচ্ছিলেন এক যুবক, যাঁর প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে প্রশাসনে। ধৃতের নাম আজাদ মল্লিক বলেই জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা, যদিও ইডির দাবি—এই নাম ভুয়ো। আসলে তিনি পাকিস্তানের নাগরিক, যিনি প্রায় এক দশক আগে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং নাম, পরিচয় পাল্টে মিশে যান জনজীবনের ভিড়ে।
প্রায় ১২-১৩ বছর আগে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতবর্ষে ঢোকেন আজাদ। প্রথমে বাংলাদেশি পরিচয়ে নিজের অস্তিত্ব তৈরি করেন, তারপর একাধিকবার ডেরা বদল করে শেষমেশ কলকাতার উপকণ্ঠ বিরাটিতে স্থায়ী হন। সেখান থেকেই ১৪ দিন আগে তাঁকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে, বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেন ইডির আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইডির দাবি, বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা মানুষজনের জন্য জাল নথি বানিয়ে দিতেন আজাদ। এ ভাবেই বহু বাংলাদেশিকে ভারতীয় পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার পেছনে ছিল তাঁর সক্রিয় হাত। শুধু তাই নয়, বাংলায় সাবলীল হয়ে উঠেছিলেন তিনি, যাতে সহজেই সন্দেহ এড়ানো যায়। কলকাতার মত ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এই চক্র এতদিন কীভাবে নির্বিঘ্নে চলছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের অন্দরেও।
তদন্তে উঠে এসেছে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। আজাদের সঙ্গে এক মহিলার ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই আরও এক সম্ভাব্য জালিয়াতির সূত্র মেলাতে ব্যস্ত ইডি। শোনা যাচ্ছে, ওই মহিলাকে বিয়ে করার পরিকল্পনা ছিল আজাদের। কিন্তু গ্রেফতারির পর সেই যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে মহিলাটির খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
আজাদ শুধু পাসপোর্টই নয়, ভারতের ভিসা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনও করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রশাসনিক কর্তাদের আশঙ্কা, এই জালিয়াতির পর্দার আড়ালে আরও অনেক বড় চক্র সক্রিয় থাকতে পারে। পাকিস্তানি নাগরিক হয়ে বাংলাদেশের ছদ্মপরিচয়ে ভারতে প্রবেশ, তারপরে দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্বের নথি জাল করে চলা—এ যেন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার এক বড় ফাঁক ফাঁস করে দিল।
এই ঘটনার জেরে সীমান্ত নিরাপত্তা ও পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়ার খামতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বস্তরে। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও, প্রশাসন মনে করছে, আজাদের পেছনে সক্রিয় রয়েছে একটি বৃহৎ আন্তর্জাতিক চক্র—যার মূল শিকড় পাকিস্তানে। ইডির পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই এখন তাকিয়ে গোটা রাজ্য।
আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করলে কি আরও আন্তর্জাতিক জালিয়াতির মুখোশ খুলে পড়বে?