সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
————————-‘
দীঘার সমুদ্র সৈকতে সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটাই আওয়াজ “জয় জগন্নাথ”।
বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ লগ্ন। আর এই শুভ লগ্নেই বহু প্রতীক্ষিত দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও উদ্বোধন। যে মাহেন্দ্রক্ষনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে গোটা রাজ্য। ভক্ত ও ভগবানের মেলবন্ধনের মাধ্যমে যে মন্দির এখন আধ্যাত্মিকতা ধর্মনীতি, রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতির মিশেলে তৈরি হওয়া দীঘার এই আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্রের ভরকেন্দ্র। মঙ্গলবার বিকেলেই মহাযজ্ঞে অংশ নিয়ে পুণ্যাহুতি দিয়ে ঐতিহ্যের জয়ডঙ্কা বাজিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।
পুণ্যাহুতি শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “তীর্থস্থান কারো একার নয়। ধর্ম সবার জন্য। পুজো দেওয়ার জন্য পুরোহিত আমার গোত্র কি তা জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি বলেছি আমি আমার গোত্রে পুজো দেই না। আমার গোত্র মা-মাটি-মানুষ।”
আর মাত্র কিছু সমযের অপেক্ষা। বুধবার সকাল থেকেই গোটা সমুদ্র সৈকত জুড়ে আওয়াজ উঠবে, “জয় জগন্নাথ”। মঙ্গলবার জগন্নাথ মন্দিরের
মহাযজ্ঞকুন্ডে মুখ্যমন্ত্রী পুণ্যাহুতি দেওয়ার পরই শুরু হয় নানা আচার-উপাচার। জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রাকে পুণ্য স্নান করিয়ে সুসজ্জিত খাটে শয়ন করানো হয়। বুধবার সকালে তাদের ঘুম ভাঙিয়ে মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন পুরীর জগন্নাথ ধামের সেবাইত রাজেশ দয়িতাপতি। প্রানপ্রতিষ্ঠার পর মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করে মন্দির উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধনী পর্ব সাঙ্গ হলে জগন্নাথ মন্দির পরিচালনার ভার তুলে দেওয়া হবে ইস্কনের হাতে। মন্দিরের পরিচালন ভার মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করবেন ইসকনের সহ-সভাপতি। রাধারমন দাস। পুরীর মন্দিরের যাবতীয় আচার- আচরণের পাশাপাশি গৌড়ীয় বঙ্গ রীতিনীতিতেও দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের আচার-আচরণ পালন করা হবে। উল্লেখযোগ্য দীঘার এই জগন্নাথ মন্দির তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা হিডকো-কে। হিটকোর পক্ষ থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে এই মন্দিরের পরিচালন ভার তুলে দেওয়া হবে ইসকনের হাতে।
মঙ্গলবার থেকেই দিঘায় প্রচুর মানুষের ঢল নেমেছে। মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন যে মহা কুম্ভের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দীঘায় যাতে না হয় সেদিকে কড়া এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা অনুযায়ী করা নিরাপত্তার মুড়ে ফেলা হয়েছে দীঘা সৈকত শহরকে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী যত মানুষের সমাগমের আশা করা হয়েছিল বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশি এই মন্দিরের উদ্বোধনী পর্বে ভক্ত সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সে কারণেই দীঘা সমুদ্র সৈকত সহ গোটা শহর জুড়ে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা যেমন বাড়ানো হয়েছে তেমনি বেড়েছে সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও। মূল অনুষ্ঠান স্থলে যাতে অতিরিক্ত মানুষের ভিড় না হয় সে কারণে রাজ্যের ব্লকে ব্লকে জায়ান্ট স্ক্রিনে এই উদ্বোধনী পর্ব সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করেছে রাজ্য প্রশাসন। দিঘা শহর জুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই দীঘায় ঢোকার বিভিন্ন রাস্তায় যার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। মন্দির সংলগ্ন প্রায় দু কিলোমিটার এলাকায় সাধারণ যানবাহন ধোকা বেরোনোই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে ধর্মীয় সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রদেশের বিভিন্ন গুণীজনেরা দীঘায় উপস্থিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই দিঘার জগন্নাথ মন্দির অঙ্গনে চলেছে মহাযজ্ঞ। ১০০ কুইন্টাল আমকাঠ ও বেলকাঠ এবং দুই কুইন্টাল ঘি দিয়ে করা হয়েছে যজ্ঞের আয়োজন। মহাযজ্ঞ ও পুজোর আয়োজনের তদারকি করেন পুরীর জগন্নাথধামের সেবাইত রাজেশ দয়িতাপতি। আর সমস্ত রীতি ও আচার-আচরণ পরিচালনায় রয়েছেন ইস্কনের রাধারমণ দাস। এই দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে সকাল থেকে জগন্নাথ মন্দিরের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার তদারকি করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।