দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি
নেতাজি সম্পর্কিত অনেক অজানা গোপন তথ্য জাপানের আর্কাইভে সযত্নে সংরক্ষিত করা আছে বলে দাবি করলেন চন্দননগর রাসবিহারী রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কর্ণধার কল্যাণ চক্রবর্তী। বিশেষ করে গদর মুভমেন্টের বেশ কিছু ফাইল এখনো ওই আর্কাইভে রাখা রয়েছে বলে তার দাবি। স্বাধীনতার আগে ভারতে পাঞ্জাবীদের দ্বারা গদর পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তথা স্বাধীনতা আন্দোলনকে মজবুত করার জন্য। আর এই দলের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন রাসবিহারী বসু।
২০১৫ সালে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক মিজুকামী ভারতের পাঞ্জাবে একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কল্যাণ বাবু দাবি করেন তিন দিন ব্যাপী সেই সেমিনারে মিজুকামী বেশ কিছু উর্দু ফাইলের উল্লেখ করেছিলেন। সেখানে তিনি ভারতীয় গবেষকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন যে তারা যেন জাপানে এসে সেই গদর আন্দোলন সম্পর্কিত উর্দু ফাইলগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। এই তথ্যগুলি থেকেই গদর আন্দোলনের অনেক অজানা ইতিহাস জানা যাবে যা ভারতবাসীরা জানেন না। তবে এরপরও সেই ফাইলগুলি এখনো ভারতবাসীর সামনে আসে নি। তাই কল্যাণবাবু বর্তমানে নিজস্ব প্রচেষ্টায় জাপানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই ফাইলগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভারতবর্ষের ইতিহাস থেকে জানতে পারা যায় ১৯৪৩ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যখন আন্দামানে গিয়েছিলেন তখন তার ছায়া সঙ্গী ছিলেন মুস্তাক আলী। মুস্তাক আলীর কাজ ছিল জাপানের সমস্ত খবরাখবর নেতাজির কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই মুস্তাক আলী নেতাজিকে আন্দামানের সেলুলার জেলের সিক্সথ উইং ঘুরে দেখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কারণ সেখানেই বন্দি ছিলেন ভারতের দিওয়ান সিং। সেলুলার জেলে ওই ভারতীয় বন্দীর মুখ থেকে অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচারের কাহিনী যাতে জানতে পারেন তার জন্যই ওই উইং ঘুরে দেখতে বলেছিলেন। কিন্তু সেদিন সেলুলার জেলে নেতাজিকে বন্দী দিওয়ান সিং এর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় নি। এরপর আন্দামান থেকে নেতাজি সরাসরি সিঙ্গাপুরে চলে যান। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও সঙ্ঘবদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্য সেই সময় তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দুর অধ্যাপক হাফিজ বরকতুল্লাহ। ওই অধ্যাপকের জন্মস্থান ভারতবর্ষে। তিনি তার নিজের দেশের স্বাধীনতার জন্য নেতাজীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই সকল বহু তথ্যই জাপানের আর্কাইভে এখনো সংরক্ষিত রয়েছে বলে দাবি কল্যাণবাবুর। সেই সময় জাপানে রাসবিহারী বসু বিভিন্ন জায়গায় কিভাবে গোপন বৈঠক করতেন সেই সব সংরক্ষিত করা আছে। সেখানে রাসবিহারী বসুর নিজের হাতে লিখে যে মিটিং ডাকতেন সেই রকম অনেক চিঠি এখনো রয়েছে। ইতিমধ্যে কল্যাণবাবু বেশ কয়েকবার জাপান গিয়েছিলেন এই সমস্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য। ২০২৪-এর মে মাসে ফের তিনি জাপান যান। সেখানে জাপানের টোকিওতে দাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইশিদার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তার কাছ থেকেই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু ও নেতাজী সম্পর্কিত বহু তথ্য সংগ্রহ করেছেন যা আগামী দিনে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাসকে অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী করবে বলে আশা করা যায়। কল্যাণ বাবুর আবেদন ভারতবর্ষের উজ্জ্বল ইতিহাস জানার জন্য সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে রাসবিহারী ও নেতাজির সম্পর্কে অনেক অজানা ইতিহাস প্রকাশ্যে চলে আসবে।