তাঁকে বাংলায় ফেরানোর দাবিতে দেওয়া বক্তৃতায় রাজ্যসভার জিরো আওয়ারে ঝড় উঠেছিল। বাংলার বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের সেই দাবির প্রেক্ষিতে বিদেশ মন্ত্রক লিখিত ভাবে জানিয়ে দিল, বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বাংলা কেন, দেশের কোথাও যেতে কোনও বাধা নেই। এই সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম মেনেই ভারত তাঁর ভিসা মঞ্জুর করেছে। তাই লেখিকার নিয়ম বর্ণিত পথে দেশের কোথাও যেতে মানা নেই। রবীন্দ্র জয়ন্তীতে এই খবর পেয়ে খুশি সাংসদ শমীক। বাংলায় আসার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন লেখিকা তসলিমা নিজেও।
বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর কলকাতাতেই ঘর বেঁধেছিলেন। ২০০৭ সালের শেষ দিকে তসলিমার ভিসা বাতিলের দাবি নিয়ে পথে নেমেছিল একটি সংগঠন। তার নেতৃত্বে ছিলেন অধুনা প্রয়াত ইদ্রিশ আলি। তিনি তখন কংগ্রেসের নেতা। তার পর এক নজিরবিহীন গোলমালের সাক্ষী হয়েছিল কলকাতা শহর। পরিস্থিতি এমন অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যে সেনা নামাতে হয় শহরে। বিক্ষোভের জেরে তসলিমাকে কলকাতা ছাড়তে হয়। ঠিকানা হয় রাজস্থানের জয়পুর। কিন্তু জয়পুরে মন টেকেনি বাঙালি লেখিকার। তার পর গঙ্গা-পদ্মা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। বদল হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের। সে দিনের আন্দোলনের নেতা ইদ্রিশ পরবর্তীতে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি প্রয়াত। কিন্তু তসলিমার আর কলকাতা ফেরা হয়নি। গত মার্চে সংসদে এই প্রসঙ্গ তোলেন শমীক। কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বামেদের তীব্র কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, “ছদ্ম-প্রগতিশীলতার আড়ালে চূড়ান্ত তোষণ, মৌলবাদের কাছে আত্মসমর্পণের দিন শেষ হোক। তসলিমার প্রত্যাবর্তন হোক।” শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারও জানিয়ে দিল, দেশের যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন ‘লজ্জা’র লেখিকা।
বিদেশ মন্ত্রকের চিঠি হাতে পেয়ে খুশি শমীক। তিনি বলছেন, “রবীন্দ্র জয়ন্তীর দিন আমার এই পত্র প্রাপ্তি রীতিমতো আনন্দের বিষয়। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের যে সামাজিক পরিস্থিতি তাতে এখানে প্রয়োজন বহুত্ববাদের প্রতিষ্ঠা। শিল্পীর মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষা সরকারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। ভারত সরকার আজ সেই অধিকারকেই প্রতিষ্ঠিত করল। আশা করব, বাংলায় যে তসলিমার পাঠককুল আছেন তাঁরাও খুশি হবেন।” শমীক আরও বলেন, “তসলিমা নাসরিনকে অত্যন্ত কদর্য ভাবে বাংলা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তার নিন্দা ও প্রতিবাদ আমরা করেছিলাম।” নাম না করে শমীক কটাক্ষে বিঁধেছেন সে দিনের আন্দোলনের অধুনা প্রয়াত নেতাকেও। বিদেশ মন্ত্রকের এই লিখিত বিবৃতির কথা জানতে পেরে খুশি ‘নির্বাসিত’-এর লেখিকা। ‘আমার মেয়েবেলা’-র রচয়িতা তসলিমা বলেন, “কলকাতা যেতে খুব ইচ্ছে করে। কলকাতা বইমেলাতে আমার বই বেরোয়। কিছুদিন আগে আমার একটা বইয়ের উদ্বোধন হল। বিভিন্ন সাহিত্য অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হয়। কিন্তু আমি যাই না, যেতে পারি না। কারণ, ওখানে সরকার আমার যাওয়াটা চান কি না আমি ঠিক জানি না। যদি নিরাপত্তা দরকার হয়, সেটা পাব কি না, এই ব্যাপারে নিশ্চিত নই বলে আমি যাই না।” নিরাপত্তা দেওয়া হলে তসলিমা কলকাতা আসতে ইচ্ছুক বলেও জানান। তিনি বলেন, “আমি বাঙালি লেখক, দুই বাংলা থেকেই বিতাড়িত। এটা ভাল লাগে না। প্রাণের টানেই তো আমি পশ্চিমবঙ্গে থাকতে গেছিলাম। যদি আমাকে বাধা না দেওয়া হয় আর যদি নিরাপত্তা পাই, আমি নিশ্চয়ই যাব। কলকাতায় যেতে পারলে খুশি হব। ভারতে কলকাতাই আমার সবচেয়ে প্রিয় শহর, যেখানে ছিলাম। যে বাংলাকে আমি ভালবাসি, সেখানে যেতে পারলে খুশি তো হবই। আজ তো রবীন্দ্র জয়ন্তী। এ রকম একটা ভাল দিনে এত ভাল খবর পেয়ে খুব ভাল লাগছে। কলকাতায় যেতে পারব ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে।”
Leave a comment
Leave a comment