ওটিটি দুনিয়ায় ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজ় এক অনন্য নজির গড়েছে—একটি গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে নির্মিত সরল অথচ হৃদয়স্পর্শী গল্প যে কতটা দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে পারে, তা বুঝিয়ে দিয়েছে চোখে আঙুল দিয়ে। সেই জনপ্রিয়তার ঢেউয়েই বোধহয় ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’ নামক নতুন সিরিজ়টি ভেসে উঠতে চেয়েছিল। কিন্তু ফলাফল? চেনা ছকের ছায়া অনুসরণ করে গড়া হলেও, ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’ শেষমেশ হয়ে দাঁড়াল এক দুর্বল ও মেলোড্রামায় ভরপুর অনুকরণমাত্র।
মুক্তির আগেই প্রচারে বলা হয়েছিল, “From the makers of Panchayat”। স্বাভাবিক ভাবেই দর্শকের প্রত্যাশার পারদ চড়েছিল। শুরু থেকেই গল্পের কাঠামো ছিল খুব চেনা—দিল্লির এক তরুণ ডাক্তার ভটকন্ডী নামের প্রত্যন্ত গ্রামে আসেন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করতে। সঙ্গে রয়েছে গ্রামের এক বহুবছরের ‘হাতুড়ে’ চিকিৎসক, যার অভিজ্ঞতা গুগল নির্ভর এবং ওষুধপত্র আসে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চোরাইপথে। এই দুই বিপরীত মেরুর চরিত্রের টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই এগোয় সিরিজ়ের কাহিনি।
অভিনয়ে ছিলেন বিনয় পাঠক ও অমল পরাশর। বিনয় বরাবরের মতোই নিজস্ব ছন্দে ছিলেন, তবে এবার যেন কোনও নতুনত্বের ছাপ ছিল না। অমল, যিনি ‘ট্রিপলিং’ দিয়ে পরিচিতি পেয়েছিলেন, এখানে এক আদর্শবাদী চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করলেও চিত্রনাট্যের সীমাবদ্ধতায় তাঁর চরিত্রে গভীরতা তৈরি হয়নি। কিছু সংলাপ এবং দৃশ্য মুহূর্তের জন্য ভালো লাগলেও, সিরিজ়ের সামগ্রিক আবহে তা টিকে থাকতে পারেনি।
দীপক কুমার মিশ্র গ্রামীণ পটভূমিতে দক্ষ পরিচালক হিসেবে পরিচিত। তবে ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’-এ তাঁর সেই মুন্সিয়ানার পূর্ণ প্রকাশ ঘটেনি। গল্পের গঠন এতটাই পূর্বানুমেয় যে দর্শক সহজেই বুঝে নিতে পারেন পরবর্তী দৃশ্য কী হতে চলেছে। ফলে রহস্য বা টানটান উত্তেজনার বদলে তৈরি হয় একঘেয়েমি। গল্পে বারবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুরবস্থা, মানসিক স্বাস্থ্য, আধুনিক বনাম স্থানীয় চিকিৎসার দ্বন্দ্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হলেও তা যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে শুধু পৃষ্ঠছোঁয়া রয়ে গেছে।
সিরিজ়ে আকাঙ্ক্ষারঞ্জন কপূরের উপস্থিতি এবং তাঁর চরিত্র বিশেষ কোনও প্রভাব ফেলে না। বরং মনে হয় ‘পঞ্চায়েত’-এর রিঙ্কির ছায়া টেনে এনে একটা নারী চরিত্র জুড়ে দেওয়া হয়েছে শুধু গাঁথুনিকে পূর্ণতা দিতে।
সব মিলিয়ে, ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’ দর্শকদের মনে তেমন ছাপ ফেলতে ব্যর্থ। গল্পে সাদামাটা আবহ, কিছু আবেগঘন দৃশ্য এবং দুই-একটি গান থাকলেও তাতে কোনও বিশেষত্ব গড়ে ওঠেনি। ‘পঞ্চায়েত’-এর যে হৃদয়স্পর্শী রসায়ন মানুষ আজও মনে রেখেছে, ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’ সেখানে হয়ে দাঁড়িয়েছে তার এক দুর্বল, পরিণতিহীন প্রতিচ্ছবি।
শেষ কথায় বলা যায়—‘পঞ্চায়েত’ আমাদের বাস্তব গ্রাম জীবনের আয়নায় এক উজ্জ্বল প্রতিফলন, আর ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’ তারই এক অসফল ছায়াপ্রতিচ্ছবি। চেষ্টা ছিল বড়, কিন্তু সাফল্য এল না।