পনেরো বছর বয়সে একজন কিশোরীর জীবনে যতটা রঙ আর স্বপ্ন থাকার কথা, তার অনেকটাই ঢেকে যায় যদি জীবনের এক অমূল্য ছায়া হঠাৎ মিলিয়ে যায়। তেমনই অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হচ্ছে সাইনা চট্টোপাধ্যায়—বাংলা চলচ্চিত্র জগতের প্রিয় নায়ক অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা। ২০২২ সালের ২৪ মার্চ, মাত্র ষাটের কোঠার আগেই পা ফেলার আগেই জীবনের যবনিকা পড়ে অভিষেকের। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন শুটিং সেটে, পেশার প্রতি তাঁর ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা যেন জীবন থেকেও বড় হয়ে উঠেছিল।
অভিষেকের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারকে নয়, নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা টলিপাড়াকেই। তবে তাঁর স্ত্রী সংযুক্তা ও মেয়ে সাইনা খুব বেশি সামনে আসেননি। মিডিয়ার আলো বা টলিপাড়ার জমজমাট আসর থেকে নিজেদের কিছুটা সরিয়ে রেখেছেন তাঁরা। ‘স্মার্ট জোড়ি’ রিয়্যালিটি শোয়ে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল অভিষেক ও সংযুক্তাকে, কিন্তু সে সফর অসম্পূর্ণই থেকে যায়। হঠাৎ এক দিন শরীর ভেঙে পড়ে অভিষেকের, আর ফেরা হয়নি।
তবে থেমে থাকেনি জীবন। অভিষেকের অনুপস্থিতি যতই বাস্তব, তাঁর উপস্থিতি যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মেয়ের হৃদয়ে। সম্প্রতি পনেরো বছরে পা দিয়েছেন সাইনা। জন্মদিনে গোলাপি পোশাকে সেজে হাসিমুখে ছবি দিয়েছেন তিনি, পাশে মা সংযুক্তা। বাবার প্রসঙ্গ উঠতেই সাইনার কণ্ঠে ভেসে এল এক আশ্চর্য বিশ্বাস, “কে বলেছে বাবা নেই? বাবা তো উপস্থিত।” সেই কথা শুনে পাশ থেকে সংযুক্তাও বলেন, “অভিষেকের উপস্থিতি আমরা অনুভব করি। ওর জন্যই আজ এত কিছু।”
সাইনার জীবন যেন চলতে থাকা এক স্মৃতির ধারায়। ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা কিছুতেই পুরণ হবার নয়। তবুও, সেই শূন্যতার মধ্যেই আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে সাহস আর সৃজনশীলতা। ইতিমধ্যেই বাংলা ধারাবাহিক ‘অনুরাগের ছোঁয়া’-তে দেখা গেছে তাঁকে। ভবিষ্যতে কোনও নতুন ধারাবাহিক কিংবা ওয়েব সিরিজে দেখা যাবে কি না, সে উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। সাইনার নিজের কথাতেই—“বিষয়টা ক্রমশ প্রকাশ্য।”
টলিউডের অনেক তারকা-সন্তান হয়তো অভিনয়ের দুনিয়ায় আসেননি। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বা চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর সন্তানদের টলিপাড়ায় দেখা যায়নি। তাপস পালের কন্যা অভিনয়ে এসেও এখন সেভাবে সক্রিয় নন। সেই প্রেক্ষাপটে সাইনার পদক্ষেপ যেন বিশেষ গুরুত্ব পায়। বাবার মতোই তিনি কি পাবে আলোকিত পথচলা? নাকি স্মৃতির ভারে তাঁর যাত্রা হবে নীরব ও নিঃশব্দ?
সে উত্তর হয়তো সময়ই দেবে। তবে এখনও পর্যন্ত যা স্পষ্ট, তা হলো—বাবা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি, প্রেরণা আর ছায়া মেয়ে সাইনার প্রতিটি পদক্ষেপে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। বাস্তবের অনুপস্থিত অভিষেক, মেয়ের হৃদয়ে আজও এক অনিবার্য উপস্থিতি।