সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
বৈশাখী দাবদাহে জ্বলছে ক্ষেত, পুড়ছে সব্জি-ফসল। চাষিদের মাথায় হাত, ফলন কমার আশঙ্কা। সবজির দাম কি বাড়বে? বাজারে বাজারে এখন একটাই প্রশ্ন সাধারণ ক্রেতাদের।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ছুঁয়েছে কোথাও সেলসিয়াস ৪০ ছাড়িয়েছে। আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই ভুলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। এই পরিস্থিতিতে একাধিক জেলায় তাপপ্রবাহ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠের ফসল বাঁচাতে দিশেহারা চাষীরা। এখনো গোটা জ্যৈষ্ঠ মাস বাকি। সাধারণত এই রাজ্যে ৮ জুন বর্ষা আসার স্বাভাবিক সময়। কিন্তু যেভাবে রোদের তেজ বাড়ছে এবং দাবদাহ তৈরি হয়েছে তাতে ঢেঁড়স, পটল, শসার ফলন কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন শাক মাঠেই শুকিয়ে গেছে। পাটের উৎপাদন ইতিমধ্যেই কমতে শুরু করেছে। প্রখর রোদের জেরে পাট বোজানোর জলাশয় জলের অভাব দেখা দিচ্ছে। ফলে পাটের ফলন নিয়েও পাট চাষীদের কপালে বলিরেখা স্পষ্ট হয়েছে। এই উচ্চ তাপমাত্রায় তিল গাছের ফুল যেমন শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি বাদাম চাষে যথেষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই ঝিঙে-কুমড়ো চাষের রোগ প্রকার প্রকল্প বেড়েছে। প্রভাব পড়েছে আম-লিচুর ফলনেও। চাঁদিফাটা গরমের জেরে অকালেই পরিপক্ক হয়ে যাচ্ছে আম, শুকিয়ে যাচ্ছে লিচ। অতিরিক্ত তাপের প্রভাবে লিচুর আকার ছোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিতে জল সেচের প্রকারভেদেও সমস্যা দেখা দেয়। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, সবজি বা আনাজ এর ক্ষেত্রে সকালে অথবা সন্ধ্যায় সেচের কাজ করতে হবে। আম লিচু কলাগাছের ক্ষেত্রে গোড়ায় বৃত্তাকার গর্ত করে জলসেচ দিতে হবে তবে অবশ্যই বিকেলের পর রোদ পড়ে গেলে এই সেচ দেওয়া আবশ্যক বলে জানিয়েছেন তারা। পাট গাছের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব আগাছা পরিষ্কার করে গাছে প্রয়োজনীয় জলের দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। তবে রোদের তেজ যেভাবে বাড়ছে তাতে জলসেচের প্রয়োজনীয় জলের যোগান কতটা মিলবে তা নিয়েও চিন্তা রয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আগাম রাজ্যের কৃষি ও কৃষি বিপণন দপ্তর সেচ দপ্তরকে নিয়ে বৈঠক করে জানিয়েছিলেন গ্রীষ্মকালীন ফসলের বা রবি মৌসুমে জলের যোগান যাতে পর্যাপ্ত থাকে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার। বৈশাখী দহনেই রাজ্যের মাঠ খেতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে জলের যোগান কতটা মিলবে তা নিয়েও আশঙ্কা বাড়ছে চাষীদের। আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা হিসেবে মাঠে চাষের কাজের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। সূর্যের তাপ প্রখর হওয়ার আগে অর্থাৎ সকালের দিকে এবং পড়ন্ত বিকেলে মাঠে চাষের কাজ করার পরামর্শ যেমন দেওয়া হয়েছে তেমনি সকাল ১১ টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত চাষীদের মাঠে চাষের কাজ না করার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। চাষের কাজ করার সময় মাথায় টুপি এবং হালকা রঙের সুতির জামা পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য ডাবের জল, ইলেকট্রল, ওআরএস ঘন ঘন খাওয়ার কথাও জানিয়েছে হওয়া অফিস। সব মিলিয়ে মাঠ-ক্ষেত যেমন স্বস্তিতে নেই তেমনি অস্বস্তি বেধেছে সাধারণ মানুষেরও। বৈশাখী দহনের জেরে ফলন কম হলে অথবা মাঠেই আনা বা ফসল নষ্ট হলে বাজারে তার দামের ক্ষেত্রে কি প্রভাব পড়বে? তা নিয়েই এখন চিন্তিত সাধারণ মধ্যবিত্ত ক্রেতারা।