হাওড়ার জগাছা থানার অন্তর্গত ইছাপুর এলাকায় ঘটে গেল এক চরম হৃদয়বিদারক ও নৃশংস ঘটনা। পরিবারের ভিতরকার দীর্ঘ দিনের কলহের পরিণতি যে এত ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। এক শিশুকন্যার চোখের সামনেই হত্যা করা হল তার মাকে। অভিযোগের তীর—তারই বাবা ও দাদার দিকে।
পেশায় ব্যবসায়ী জিতেন্দ্র জয়সওয়াল ও তাঁর স্ত্রী সুলেখা জয়সওয়ালের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি ছিল অনেক দিনের। একই পরিবারের সদস্য হলেও ছেলে শেখর জয়সওয়ালও মায়ের সঙ্গে প্রায়শই বিরোধে জড়িয়ে পড়তেন। স্থানীয়দের মতে, পরিবারে অশান্তি ছিল প্রতিদিনের ঘটনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা এই মর্মান্তিক পর্যায়ে পৌঁছবে, তা কেউ ভাবতেও পারেননি।
ঘটনার দিন রাতে আচমকাই সুলেখা দেবীর ছোট্ট মেয়েটির কান্না ও চিৎকারে চারদিক কেঁপে ওঠে। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে দেখেন, নিথর অবস্থায় পড়ে রয়েছেন সুলেখা। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন জগাছা থানায়। পুলিস এসে জিতেন্দ্র ও শেখর—উভয়কে আটক করে। অন্যদিকে, শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ আশ্রয়ে।
এই ঘটনায় সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে সেই ছোট্ট শিশুটির মুখে। শিশুটি জানায়, তার বাবাই প্রথমে মায়ের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন, আর দাদা শ্বাসরোধ করে মাকে হত্যা করে। এমন ভয়ানক দৃশ্য দেখে যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারে, অথচ এই শিশুটি নিজের চোখে সেই নির্মমতা দেখেছে এবং সাহস করে তা জানিয়েও দিয়েছে।
পুলিস ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে তৎক্ষণাৎ খুনের মামলা রুজু করেছে এবং শুরু করেছে জিজ্ঞাসাবাদ। অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে ঘটনার পেছনের আসল কারণ। মৃতদেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে এবং শিশুকন্যার জবানবন্দি রেকর্ডের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সমাজের সামনে উঠে এসেছে এক গা ছমছমে বাস্তব—পরিবার যখন ভেঙে পড়ে, তার সবচেয়ে নির্মম প্রভাব পড়ে শিশুদের উপর। তারা হারায় নির্ভরতা, ভালোবাসা আর নিরাপত্তার আশ্রয়। আর যখন সেই ভাঙন ছুঁয়ে যায় এমন এক নিষ্ঠুর পর্যায়, যেখানে মাকে খুন হতে হয় নিজের সন্তানের সামনে, তখন প্রশ্ন উঠে যায়—আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো আদৌ কতটা নিরাপদ?
এই শিশুটি তার মাকে হারিয়েছে। কিন্তু সে হয়ে উঠেছে একটি খুনের মামলার মূল সাক্ষী। তার সাহস সমাজকে এক কঠিন বার্তা দেয়—সত্য যত ভয়ানকই হোক না কেন, তাকে সামনে আনতেই হবে। আর সেই সত্য জানার অন্যতম পথ হয়ে উঠতে পারে শিশুর চোখে দেখা দৃশ্য।