কোনও রাখঢাক না করেই মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশে বাণিজ্য সফরে বেড়িয়ে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।আর তাতে যে তিনি রীতিমত সফল তা সম্ভবত স্বীকার করে নেবেন তাঁর বড় সমালোচকও। ট্রাম্পের সফরে সৌদি আরব ও কাতারের পর শেষ পর্বে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি।এবারের সফরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউএই-এর মধ্যে ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে, যা গালফ অঞ্চলে আমেরিকার মোট বিনিয়োগ ২ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান ইউএই প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। নাহিয়ানের ভূয়সী প্রশংসা করে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘ সময়ের ভাল বন্ধু।’’ আর নাহিয়ান জানিয়েছেন, ‘‘বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও আমেরিকা একসঙ্গে কাজ করবে।’’ আবুধাবিতে দুদেশের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আমিরশাহি এআই অ্যাকসেলারেশন পার্টনারশিপ নামে একটি কাঠামো তৈরিতে একমত হয়েছে।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই চুক্তিগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউএই-র বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। গত মার্চে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ফ্রেমওয়ার্কের অংশ হিসেবে ইউএই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), সেমিকন্ডাক্টর, জৈবপ্রযুক্তি ও শক্তি খাতে বিনিয়োগ করবে।” এছাড়াও, ইউএই-এর ডেটা সেন্টারের সমপরিমাণ ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটা সেন্টার আমেরিকায় তৈরিতে সম্মত হয়েছে দেশটি।
পাশাপাশি হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বোয়িং ও জিই অ্যারোস্পেস ইতিহাদ এয়ারওয়েজের কাছ থেকে ১৪.৫ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২৮টি বোয়িং ৭৮৭ ও ৭৭৭এক্স বিমান। এই চুক্তি মার্কিন উৎপাদনশীলতা বাড়াবে এবং ৬০,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
এছাড়াও, ওকলাহোমায় এমিরেটস গ্লোবাল অ্যালুমিনিয়াম ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে একটি অ্যালুমিনিয়াম স্মেল্টার প্রকল্প নির্মাণ করবে, যা গত ৪৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নতুন অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন কেন্দ্র। জানা গেছে এটি ১,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং মার্কিন উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করবে। এক্সন মবিল, অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়াম ও ইওজি রিসোর্সেস আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির (এডনক) সঙ্গে ৬০ বিলিয়ন ডলারের তেল ও গ্যাস উৎপাদন প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে, যা উভয় দেশে শক্তিশালী কর্মসংস্থান গড়ে তুলবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সফরকে সম্মান জানিয়ে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা ও রাস্তাগুলো আমেরিকান পতাকার রঙে সাজানো হয়। দুবাই মিডিয়া অফিস এক টুইটে জানিয়েছে, “ট্রাম্পের সফরকে স্বাগত জানাতে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খলিফা আজ লাল, সাদা ও নীল রঙে আলোকিত।” হোয়াইট হাউসও এই দৃশ্যের ছবি শেয়ার করে লিখেছে, “বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন আজ ট্রাম্প ও আমেরিকাকে সেলাম জানাল!”
এদিকে, মিশিগানের প্যালিসেডস সাইটে হোলটেক ইন্টারন্যাশনাল ও আইএইচসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হোল্ডিং কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ১০ বিলিয়ন ডলারে এসএমআর-৩০০ মডুলার নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর নির্মাণ করা হবে।এছাড়াও ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে নিউক্লিয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়নে, যা মার্কিন শক্তি নিরাপত্তা জোরদার করবে। কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে বিলাসবহুল বোয়িং জেট উপহার বিতর্ক কাঁটা হিসেবে বিঁধলেও এই সফরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
Leave a comment
Leave a comment
