ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে আশার আলো
দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে এবার মিলল বড়সড় সুখবর। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে তাঁর কথোপকথন ‘অত্যন্ত ভালো’ হয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার পুতিনের সঙ্গে দু ঘণ্টা ধরে ফোনে কথা বলার পর পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ঘোষণা করেন যে রাশিয়া ও ইউক্রেন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে।
তবে ট্রাম্পের রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা একেবারে প্রথম নয়। ভোটের ময়দানে নেমে প্রচারে এবং ক্ষমতায় এসেও বারবার এই লাগাতার লড়াই থামানোর কথা বলেছেন তিনি।হয়ত মজা করেই বলেছিলেন একদিনেই থামিয়ে দিতে পারেন এই যুদ্ধ।কিন্তু বাস্তবের মাটি যে এত সহজ নয় তা বুঝেছেন ফিল্ডে নেমে। হোয়াইট হাউসে জেলেনেস্কির সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদ থেকে রাশিয়ায় বার বার দূত পাঠানো সবই উঠে এসেছে খবরে।কিন্তু এর ফলে যুদ্ধ বন্ধের পথে সলতে পাকানোটা শুরু হওয়া ছাড়া আর বিশেষ কিছুই হয় নি।
কী বললেন ভ্লাদিমির পুতিন
ঘটনাচক্রে, গত সপ্তাহেই ইস্তানবুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের আধিকারিকদের মধ্যে একদফা বৈঠক হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা। এদিন ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের পর ইস্তানবুলের সেই আলোচনার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রতি পরোক্ষে বার্তা দিয়ে পুতিন বলেছেন, শান্তি ফেরানোর জন্য ইউক্রেনের নমনীয়তা দেখানো উচিত। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কিয়েভের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির প্রস্তাবনা হিসেবে একটি ‘মেমোরেন্ডাম’-এর কথা উল্লেখ করেন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন পুতিন।
কী বার্তা ট্রাম্পের?
পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পরেই ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানান যে রাশিয়া ও ইউক্রেন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। তিনি তার এই কথোপকথনকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে আখ্যা দেন। বলেন, এই আলোচনা যুদ্ধের সমাপ্তির দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার শর্তাবলী সরাসরি উভয় পক্ষের মধ্যে নির্ধারিত হবে। তাঁর মতে, এটাই একমাত্র উপায়, কারণ তারা আলোচনার এমন বিবরণ জানে যা অন্য কেউ জানবে না।
ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে কনফারেন্স কল
পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পরই ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে কনফারেন্স কল করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।ট্রাম্প বলেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেয়েন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎজ এবং ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গে একটি কনফারেন্স কল করেছেন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অবিলম্বে শুরু করার পাশাপাশি ট্রাম্প আরও বলেন যে ভ্যাটিকান, পোপের প্রতিনিধিত্বে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
কাজেই রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ থামাটা এখন অনেকে সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছেন।ট্রাম্প এই আবহেই বিশাল বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা জানাতে ভোলেন নি।ট্রাম্প জানিয়েছেন যে এই ভয়াবহ রক্তক্ষয় শেষ হলে রাশিয়া আমেরিকার সঙ্গে বৃহৎ পরিসরে বাণিজ্য করতে চায়।ট্রাম্পের মতে এতে রাশিয়া যুদ্ধখরচ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে আর্থিক সংকটে থাকা্র সঙ্কট থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবে। ইউক্রেনও তাদের দেশ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় বাণিজ্যের মাধ্যমে লাভবান হতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
