ভারতেও ফের করোনার চোখ রাঙানি। মুম্বই, চেন্নাই, আমদাবাদে সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে হংকং ও সিঙ্গাপুরে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, ভারতে এখনও তেমনটা হয়নি। এই আবহেই প্রশ্ন উঠছে, কলকাতা নিরাপদ কি?
মহারাষ্ট্র স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত রাজ্যে মোট ১০৬টি কোভিড কেসের মধ্যে শুধুমাত্র মে মাসেই মুম্বই শহরে ৯৫টি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যাকে অনেকেই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বলে মনে করছেন। বর্তমানে ১৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি। সংক্রমণ রুখতে যাদের বেশির ভাগকেই কেইএম হাসপাতাল থেকে সেভেন হিলস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ বা তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত রোগ থাকলেই রোগীদের কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছে।
পুনে শহরে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নাইডু হাসপাতালে ৫০টি বেড সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। যদিও বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে কোনও কোভিড রোগী নেই। তামিলনাড়ুর পুদুচেরিতে নতুন করে ১২টি কোভিড সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। চেন্নাই শহরে চিকিৎসকেরা বলছেন, আগে যেখানে ফ্লু-জনিত জ্বর দেখা যাচ্ছিল, এখন তা অনেক ক্ষেত্রেই কোভিড-জনিত জ্বরের রূপ নিচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কায় কিছু হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার, যেমন অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও হার্ট সার্জারি সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্নাটকে ১৬ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গুজরাতের আমদাবাদ শহরে এক দিনে সাতটি নতুন কেস ধরা পড়েছে। হোম আইসোলেশনে রয়েছেন সাত জনই। তাঁদের নমুনা ‘জিন পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু শহর কলকাতার কোভিড গ্রাফ কি বলছে? জানা গিয়েছে, মার্চের মাঝামাঝি করে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ে খাস কলকাতায়! নতুন এই ভাইরাসের নাম– ‘হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস’ বা সংক্ষেপে, এইচএমপিভি। যদিও বর্তমানে শহর কলকাতায় নতুন করে সংক্রমণের কোনও খবর নেই। কিন্তু মুম্বই, চেন্নাইয়ের মতো বড় শহরে করোনা ছড়ানোর খবর জেনে তৎপর হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য দফতর। বিমানবন্দরে যাত্রীদের আনাগোনার উপর নজর রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে করোনার সঙ্গে লড়ার পরিকাঠামোকেও নতুন করে তৈরি রাখার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং মুম্বই, চেন্নাই এবং আমদাবাদে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতেই, কলকাতার অন্তত তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড সতর্কতা বেড়েছে। তবে এখনও কোনও করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। তবুও কিছু হাসপাতাল উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। দুটি হাসপাতাল পৃথকভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করেছে। রোগী, দর্শনার্থী এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কয়েকটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা পুনরায় চালু করেছে বিপি পোদ্দার হাসপাতাল। পিয়ারলেস হাসপাতালে, কোভিডের লক্ষণযুক্ত রোগীদের জন্য দুই শয্যা বিশিষ্ট একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে।
২০২৩ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ মহামারির সমাপ্তি ঘোষণা করলেও ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে আবারও সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। ভারতে বর্তমানে বেশিরভাগ কেসই মৃদু প্রকৃতির, এবং সাম্প্রতিক এই বৃদ্ধির সঙ্গে মৃত্যু বা আইসিইউতে ভর্তির খবর নেই। বিশেষ করে বয়স্ক, গর্ভবতী মহিলা ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা ব্যক্তিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সংক্রমণের ঝুঁকি ও তীব্রতা কমাতে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন হিকিৎসকরা।