গণবিদ্রোহের প্রবল চাপে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেই ঘটনার প্রায় এক বছর হতে চলল। বর্তমানে ভারতের নিরাপত্তা ঘেরাটোপে রয়েছেন মুজিব-কন্যা। সেখান থেকে দফায় দফায় বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছেন তিনি। কিন্তু গত বছর পাঁচ অগাস্ট সকালে গণভবনে ঠিক কী ঘটেছিল? কার পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন হাসিনা? আর সেটা কি খুব সহজে হয়েছিল? সেই তথ্যই এ বার সামনে এল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন। আর সেই মামলার শুনানিতেই বাংলাদেশ সরকারের আইনজীবী মহম্মদ তাজুল ইসলাম গত বছরের ৪ ও ৫ অগাস্টের চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য আদালতকে জানিয়েছেন। গত বছরের ৫ অগাস্ট সকালে ঠিক কী ঘটেছিল সেই তথ্য দিয়েছেন তিনি। আইনজীবীর কথায়, সামরিক আধিকারিকরা ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন হাসিনাকে। আর তা শুনে রেগে যান হাসিনা। জবাবে জানিয়েছিলেন, ‘তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, গণভবনে কবর দিয়ে দাও।’
আদালতে আইনজীবী আরও জানান, বাংলাদেশের সংসদের তৎকালীন স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীও হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। যদিও তৎকালীল একাধিক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার এর বিরোধিতা করেন। আইনজীবীর কথায়, এই বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত নিতে গত ৪ অগস্ট রাতে গণভবনে একটি জরুরি বৈঠক হয়। আর সেই বৈঠকে তৎকালীন হাসিনার সময়ের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রী ও শীর্ষ আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন। আর সেই বৈঠক খুব একটা সুখকর ছিল না, রাগারাগি ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বলেও দাবি আইনজীবীর।
ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, সেদিন রাতে দেশের তিন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হয় শেখ হাসিনার। তৎকালীন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল পরিস্থিতির কথা ভেবে হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি তুলেছিলেন। আর তাতে তিনি চরম ক্ষুব্ধ হন। এমনকী ক্ষমতা ছাড়বেন না বলেও বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি কড়া হাতে বিক্ষোভ দমনের নির্দেশও দিয়েছিলেন হাসিনা।
সরকারি আইনজীবীর দাবি, সেই সময় হাসিনা নাকি দাবি করেছিলেন, ‘সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে কিছু লোককে মেরে ফেললে বিক্ষোভ এমনিতেই দমন হয়ে যাবে’। এমনকী হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর নির্দেশও নাকি দেওয়া হয়। যদিও তাতে তৎকালীন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান খুব ক্ষুব্ধ হন এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টাকে একহাত নেন। গত ৪ অগস্টের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনও। বিক্ষোভ থামাতে বাংলাদেশ পুলিশ র্যাব যেভাবে কাজ করছে তা নিয়ে প্রশংসাও করেছিলেন।
কিন্তু পুলিশের পক্ষে আর যে বিক্ষোভ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন পুলিশকর্তা। আর তাতে চরম ক্ষুব্ধ হন হাসিনা, আদালতে দাবি আইনজীবীর। তাঁর কথায়, সেই সময়েই মুজিবকন্যা বলেন, ‘তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেল এবং গণভবনে কবর দিয়ে দাও।’ আর এরপরেই সামরিক আধিকারিকরা গণভবনের একটি ঘরে হাসিনার সঙ্গে একান্তে আলোচনা করেন এবং পুরো পরিস্থিতি বোঝান। কীভাবে চারপাশ ঘিরে মিছিল আসছে সেই ব্যাখ্যা করা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেন শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। আইনজীবীর কথায়, একটা সময় দিদির পা পর্যন্ত জড়িয়ে ধরেছিলেন। কিন্তু তাতেও রাজি হননি পদত্যাগ করতে। সেই সময় বিদেশ থেকে হাসিনার ছেলে জয় সামরিক আধিকারিকরা কথা বলেন। শেষমেশ ছেলের কথা শুনেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মুজিবকন্যা ইস্তফা দেন বলে দাবি সরকারি আইনজীবীর।