সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকাদের চাকরির পথ খোলা রেখেই আগামী ৩০ মে নতুনভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
২০১৬ এসএসসি মামলার চাকরি হারা যোগ্য শিক্ষকদের পাশাপাশি আরো নতুন শিক্ষকদের নিয়োগ করবে রাজ্য সরকার। শুধু নবম দশম শ্রেণীর জন্যই নয়, একাদশ দ্বাদশ শ্রেণি ক্ষেত্রে এই নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে আগামী ৩০ মে। শিক্ষকদের নিয়োগের পাশাপাশি গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি শিক্ষা কর্মী দাও এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। সবমিলিয়ে ২০১৬ এসএসসি চাকরি বাতিল মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া টাইমলাইন অর্থাৎ ৩১ মে-র মধ্যেই নতুনভাবে শিক্ষক শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মীদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, যেহেতু রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এই চাকরি বাতির মামলা নিয়ে রিভিউ পিটিশন করেছে সুপ্রিম কোর্টে। সেজন্য রিভিউ পিটিশনে সুপ্রিম কোর্ট কি বলে তার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল। অন্যদিকে চাকরি বাতিল মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যে 31 মেয়ের মধ্যে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টে গরমের ছুটি চলছে। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ আঘাত সুপ্রিম কোর্ট ফের চালু হবে কিন্তু ততদিনে অনেকটাই দেরি হয়ে যাবে। তাই আদালত অবমাননা যাতে না হয় সে কারণেই আগামী ৩০ মে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক শিক্ষক শিক্ষিকার নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। সেক্ষেত্রে মোট ৪৪ হাজার ২০৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের নিয়োগ করবে রাজ্য সরকার। এরমধ্যে চাকরি হারা শিক্ষক শিক্ষিকা সহ নতুন শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও নিয়োগ করা হবে। শূন্য পদ অনুযায়ী নবম ও দশম শ্রেণির জন্য ১১৫১৭ জন শিক্ষক একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ৬৯১২ জন শিক্ষক নতুন ভাবে ৫৭১ জন গ্রুপ সি এবং ১০০০ জন গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ ছাড়াও ২৪ হাজার ২০৩ জন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরির জন্য এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি করা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, শিক্ষকদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও যারা শিক্ষা কর্মী অর্থাৎ গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি যাদের আদালতের নির্দেশে চাকরি চলে গেছে। তাদের জন্য আলাদাভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে রাজ্য সরকার। শিক্ষকদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কয়েকদিন পরেই শিক্ষা কর্মীদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদি রিভিউ পিটিশানে গ্রুপ সি গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য কোন সুফল না মেলে তাহলে শিক্ষা দপ্তর ছাড়া অন্য আরও ৩-৪ টি সরকারি দপ্তরে শূন্য পদ তৈরি করে সেই কর্মীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যেসব শিক্ষকদের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে যাদের স্কুলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট সেই ধরনের শিক্ষকদের মধ্যে যদি কেউ অন্য সরকারি দপ্তরে চাকরি ছেড়ে শিক্ষকের কাজে যোগদান করেছিলেন তাহলে তারা তাদের পুরনো চাকরিতে ফিরতে পারবেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে তাদের আবেদন করতে হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্য সরকার যে দুটি অপশন রাখছে অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নতুনভাবে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ যেখানে পরীক্ষায় বসতে হবে চাকরি-হারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে যে রিভিউ পিটিশন করা হয়েছে গরমের ছুটির পর তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দেবে তা যদি উপযুক্ত হয় তাহলে সেই পথেই এগোবে রাজ্য সরকার। সেক্ষেত্রে দুটি অপশন মাথায় রেখেই চলতে হবে চাকরি-হারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও।
মুখ্যমন্ত্রীর মতে , ” পরীক্ষা দেব না এই ধরনের মনোভাব বজায় রাখা ঠিক নয়। কারণ এটা রাজ্য সরকারের নির্দেশ নয় এটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজ্য দুটি অপশনের কথা ভেবেছে। প্রথম অপশন যদি কাজে না লাগানো হয় তাহলে দ্বিতীয় অপশনে কোন লাভ পাওয়া যাবে না। তাই সমস্ত চাকরিহারা ভাই-বোনেদের বলছি আপনারা দুটো অপশনই কাজে লাগান।” মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা,
” অন্যের কথায় কাকে কান নিয়ে গেল বলে সেই অনুযায়ী ছুটবেন না। রাজ্য সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই দুটি অপশন আপনাদের সামনে রেখেছে। সেই অপশন আপনারা কাজে লাগান। সরকার চায় না কারো চাকরি চলে যাক। সে কারণেই সরকার রিভিউ পিটিশন করেছে এবং সুপ্রিম কোর্টে চাকরি হারাদের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।”
উল্লেখযোগ্য নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও সেক্ষেত্রে যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে বয়স সীমা শিথিল করা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি চাকরি হারাদের ক্ষেত্রে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা কে অগ্রাধিকার দেয়া হবে যাতে তারা নিজেদের স্কুল এই চাকরি করতে পারেন। সেজন্য তাদের এই কাজের অভিজ্ঞতা কে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করা হবে। বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যারা অনলাইন আবেদন করবেন তাদের ১৬ই জুনের মধ্যে আবেদন করতে হবে এবং সাধারণ আবেদনকারীদের আবেদনের শেষ দিন ১৪ জুলাই। আগামী ১৫ নভেম্বর এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত প্যানেল প্রকাশিত হবে। এবং নভেম্বর মাসের মধ্যেই কাউন্সেলিং এর কাজ সম্পূর্ণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই নতুন ভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতি রাজ্য সরকার সহানুভূতিশীল সে কথা বারবার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন ” যথাযথ জায়গায় সসম্মানে নিজেদের কাজের জায়গায় আপনারা ফিরে আসুন। আপনারা যারা চাকরি করছেন তারা চাকরি করুন ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যাদের বয়স ৪০ পেরিয়েছে তারাও সুযোগ পাবেন। অভিজ্ঞতা বাড়তি সুবিধা দেবে”। এদিনের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মধ্যপ্রদেশের ব্যাপন কেলেঙ্কারির কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে শিক্ষকদের চাকরি হারার কথা উল্লেখ করেন। সেই সমস্ত রাজ্যের শিক্ষকরা সুবিচার পাননি বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এ রাজ্যের চাকরিহারা শিক্ষকরা যাতে সকলেই চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারেন। তাদের জন্য বিচারের বাণী যাতে নীরবে নিভৃতে না কাঁদে সে ব্যাপারে মানবিক এবং সংবেদনশীল হয়েই উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।