সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রীর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক এসএসসি নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করল স্কুল শিক্ষা দপ্তর। একই সঙ্গে প্রকাশিত হলো নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগের বিধি। প্রকাশিত নিয়োগ বিধি অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, ইন্টারভিউ, ক্লাস করানোর ক্ষমতার ওপর তৈরি হবে প্যানেল। লিখিত পরীক্ষা হবে OMR শিটে, ৬০ নম্বরে। ১০ নম্বর থাকবে শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য। এক্ষেত্রে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেলেই ১০ নম্বর পাবেন। ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে নম্বর পেলে ৮ নম্বর ও ৫০ শতাংশের কম পেলে ৬ নম্বর দেওয়া হবে। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর, মৌখিক ইন্টারভিউ এর জন্য দশ নম্বর, ক্লাস নেওয়ার দক্ষতার উপর দেওয়া হবে ১০ নম্বর। কর্মরত শিক্ষকদের একাধিক সুবিধা দিয়েছে রাজ্য। সরকারি বা সরকারি নিয়ন্ত্রিত স্কুলে প্রতিবছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য পাওয়া যাবে দুই নম্বর করে। এক্ষেত্রে কারোর পাঁচ বছর বা তার বেশি শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে মিলবে পুরো ১০ নম্বর। ক্লাস নেওয়ার ক্ষমতার উপর থাকবে ১০ নম্বর। ইন্টারভিউয়ের উপর থাকবে ১০ নম্বর। হঠাৎ কর্মরত শিক্ষকরা এই বাড়তি ৩০ নম্বরের সুবিধা পাবেন নয়া নিয়োগ বিধিতে। লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার উপর জোর দিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর।
নয়া নিয়োগ বিধি অনুযায়ী এবার উত্তরপত্রের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করেছে রাজ্য সরকার। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার পাঁচ দিন আগে মডেল উত্তরপত্র প্রকাশ করবে এসএসসি।
মডেল উত্তরপত্রের ওপর যে মতামত আসবে তা যাচাই করবে এসএসসি। যাচাই করার জন্য প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর দুজন করে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের অবশ্যই নিদেনপক্ষে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত পেলেই চূড়ান্ত উত্তরপত্র আপলোড করবে এসএসসি। চূড়ান্ত প্যানেল প্রকাশ করার সময় সফল পরীক্ষার্থীদের নিজেদের নম্বর, ক্যাটেগরি ভিত্তিক কাট অফ মার্কস, সেই পরীক্ষার্থীর চূড়ান্ত নম্বর সবকিছুই আপলোড করা হবে।
সরকারি বিধি অনুযায়ী নতুন নিয়োগের আবেদনের ক্ষেত্রে ৪০ বছরের বয়সসীমা ধার্য করা হয়েছে। চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রকাশের পর এক বছর মেয়াদ থাকবে প্যানেলের।
এসএসসি প্রয়োজন মনে করলে রাজ্যের অনুমতি সাপেক্ষে সেই প্যানেলের মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়াতে পারে। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হবার পর আরও দু’বছর এসএসসি কে ওএমআর শিট সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। প্রসঙ্গত এসএসসি মামলা চলাকালীন হাইকোর্টে এই সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে যথেষ্ট সবাল জবাব হয়েছে। আদালতে পর্যবেক্ষণকে মান্যতা দিয়েই সংরক্ষণের সময় মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি ওএমআর শিটের স্ক্যান কপি দশ বছর সংরক্ষণ করে রাখা হবে বলেও নিয়োগ বিধিতে জানিয়েছে শিক্ষা দপ্তর।
নবম – দশম,একাদশ – দ্বাদশের পাশাপাশি উচ্চ প্রাথমিকের (ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও এবার বদল এনেছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর।
আগের নিয়ম মেনেই উচ্চ প্রাথমিকের জন্য টেট পাস বাধ্যতামূলক থাকছে। তবে প্রাপ্ত নম্বরের সর্বাধিক গুরুত্ব বা ওয়েটেজ এর ক্ষেত্রে উচ্চ প্রাথমিকে একাধিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। টেটের প্রাপ্ত নম্বর এর সর্বাধিক গুরুত্ব বা ওয়েটেজ থাকবে ৪০ নম্বরের। লিখিত পরীক্ষা (omr) নেওয়া হবে ২৫ নম্বরের। ইন্টারভিউ এর জন্য ১৫ নম্বর থাকবে।
ক্লাস নেওয়ার ক্ষমতার উপর পাঁচ নম্বর ও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে ৫ নম্বর যুক্ত হবে।
সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্য প্রশাসনিক ভবন নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ৩১ শে মে-র মধ্যে এসএসসি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। সেই নির্দেশ মতোই ৩০ মে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি চলে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাদের জন্য অগ্রাধিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মোট ৪৪২০৩ জনের পদে নিয়োগ হবে। যার মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণীর জন্য ১১৫১৭, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ৬৯১২ শূন্য পদ তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রুপ সি’র জন্য ৫১৭ জন এবং গ্রুপ ডি’র জন্য ১০০০ জনের নতুন পদ তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ১৬ জুন থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। আবেদন করার শেষ দিন ১৪ জুলাই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যাদের চাকরি চলে গিয়েছে তাদেরও পরীক্ষায় বসতে হবে। সেই সমস্ত চাকরি হারারাও বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আবেদন করবেন। এসএসসি তরফ থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ইন্টারভিউ হবে নভেম্বর মাসের প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে। প্যানেল প্রকাশ করা হবে ২৪ নভেম্বর। কাউন্সেলিং শুরু হবে ২৯ নভেম্বর থেকে। বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরে শুধুমাত্র চাকরি হারারা নয়, নতুনরাও আবেদন করতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যাদের চাকরি চলে গিয়েছে তাদের পাশে থাকার বার্তা ইতিমধ্যেই একাধিকবার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনও করা হয়েছে।