সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
অবশেষে দলের নির্দেশ মত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশ মন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে চিঠি দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন অনুব্রত মণ্ডল। কিছুদিন আগেও যার প্রভাবে শুধু বীরভূম নয় পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে ‘বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেতো’ আজ সেই “চড়াম চড়াম” শব্দবন্ধের স্রষ্টা অনুব্রত মণ্ডল তথা বীরভূমের কেষ্ট নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন দলের নির্দেশে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে দেওয়া চিঠিতে অনুব্রত উল্লেখ করেছেন, রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তরের যেকোনো পুলিশ আধিকারিকরা সবাই তার কাছের। তাদের অপমান করার কথা তিনি ভাবতে পারেন না। যদিও সাম্প্রতিক ঘটনার জন্য তিনি দুঃখিত। মুখ্যমন্ত্রীকে এই মর্মে লেখা চিঠিতে অনুব্রত উল্লেখ করেছেন ” দিদির পুলিশের কাছে একবার কেন ১০০ বার ক্ষমা চাইতে পারি। দিদির পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে আমি সহ্য করতে পারি না। আমি নানা রকম ওষুধ খাই তাই মাথা গরম হয়ে যায়। তবে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমি সত্যিই দুঃখিত।” পাশাপাশি এই ঘটনার বিপত্তি কোন চক্রান্ত আছে কিনা সে কথাও একবার খতিয়ে দেখতে দলনেত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন কেষ্ট।
বোলপুরের সিঙ্গি গ্রামে অনুব্রত অনুগামী বনাম কাজল শেখ অনুগামীদের মধ্যে গন্ডগোলের জেরে ঘটনার সূত্রপাত। কেষ্ট অনুগামীরা গুরুতর জখম হওয়ায় মাথা গরম করে বোলপুর থানার আইসির উপর ক্ষেপে যান অনুব্রত। অভিযোগ করা সত্ত্বেও কেন অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন না এই কৈফিয়ত চাইতে গিয়ে বোলপুর থানার আইসিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন কেষ্ট। আর বীরভূমের একদা ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ নেতা তথা বীরভূম জেলার প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের কথোপকথন ভাইরাল হয়ে যায়। এই ভাইরাল অডিও টেপের ভিত্তিতেই দলের রাজ্য নেতৃত্ব অনুব্রতদের উপর ক্ষুব্ধ হয় এবং চার ঘণ্টার সময়সীমা দিয়ে অবিলম্বে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দেয়া হয় অনুব্রত মণ্ডলকে। অন্যথায় অনুব্রত মণ্ডলকে শোকজ করা হবে বলে জানিয়ে দেয় রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস। একদিকে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের পুলিশের বিষয় এবং অন্যদিকে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশ সবমিলিয়ে কিছুটা বাধ্য হয়েই নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যেই সরাসরি রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই চিঠি লিখে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন একদা ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ অনুব্রত মণ্ডল। কিছুদিন আগেই বীরভূম জেলার কোর কমিটি ভেঙে দিয়েছেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা নিজে বীরভূম জেলার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয়টি নজরদারি করবেন বলে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল কে সকলের সঙ্গে সহযোগিতা করে জেলার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশও দিয়েছিলেন দলনেত্রী। তা সত্ত্বেও বোলপুর থানার আইসি সঙ্গে অনুব্রত এই কদর্য ব্যবহার নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অসন্তুষ্ট রাজ্য পুলিশ সহ মমতাও। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনার পর অনুব্রত মণ্ডলের নিরাপত্তাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনুব্রত নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত চারজন নিরাপত্তা রক্ষী ও একটি গাড়ি ইতিমধ্যেই তুলে নিয়েছে রাজ্য পুলিশ। সব মিলিয়ে দলীয় ভাবে এবং প্রশাসনিক তরে চাপ সৃষ্টি করে অনুব্রতকে ক্ষমা চাইতে কিছুটা হলেও বাধ্য করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।