দেশে ফের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনা সংক্রমণ। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে সক্রিয় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৭১০ জনে। গত কয়েক মাসের স্থিতাবস্থার পর হঠাৎ করেই সংক্রমণে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ২৫ মে শেষ হওয়া সপ্তাহেই আক্রান্তের সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।
সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে কেরালায়। সেরাজ্যে বর্তমানে ১,১৪৭ জন করোনা আক্রান্ত। এর পরে রয়েছে মহারাষ্ট্রে ৪২৪ জন, দিল্লিতে ২৯৪ জন ও গুজরাটে ২২৩ জন। কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে ১৪৮ জন করে সংক্রমিত হয়েছেন। বাংলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ১১৬-তে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২২ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। গত একদিনে মহারাষ্ট্রে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিল্লি, গুজরাট, কর্ণাটক, পাঞ্জাব ও তামিলনাড়ুতে একজন করে মৃত্যুর খবর মিলেছে।
তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আশ্বাস, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংক্রমণ মৃদু প্রকৃতির, আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কেরালায় বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার কারণে বেশি সংক্রমণের খবর সামনে আসছে। সাত মাস পর প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে মিজোরামে। দু’জন আক্রান্ত হয়েছেন সেরাজ্যে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন সংক্রমণের ঢেউয়ের পেছনে রয়েছে দুটি নতুন ওমিক্রন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এলএফ.৭ এবং এনবি.১.৮.১। তবে এখনো পর্যন্ত এই দুই সাব-ভ্যারিয়েন্টকে “ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন” বা “ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট” হিসেবে চিহ্নিত করেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বর্তমানে দেশে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের আগের সাব-ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএফ.৭ এবং এনবি.১.৮.১ সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলি পূর্বে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হলেও, এই ভ্যারিয়েন্টগুলির দীর্ঘমেয়াদি বা মারাত্মক সংক্রমণের আশঙ্কা এখনো পাওয়া যায়নি।লক্ষণগুলিও মূলত সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতোই। জ্বর, গলা খুসখুসে ভাব বা ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ক্লান্ত লাগা, দুর্বলতা ইত্যাদি।
সংক্রমণ বাড়ছে। তাই হাসপাতালগুলিকে আগাম প্রস্তুতি রাখতে বলেছে কয়েকটি রাজ্য সরকার। হাসপাতালগুলিকে পর্যাপ্ত বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার, টেস্ট কিট ও ভ্যাকসিন মজুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ ও যাঁদের আগেই কো-মর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদেরকে জনসমাগম বেশি এমন এলাকায় গেলে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং সাবধানতা ও সচেতনতাই সংক্রমণ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। নিয়মিত হাত ধোওয়া, মাস্ক পরা এবং উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার নিতে হবে দ্রুত।