‘বিদেশি’ ঘোষণা অসমের গৃহবধূকে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে ঘরে ফিরেন ৫০ বছর বয়সী প্রৌঢ়া রহিমা বেগম। অসমের গোলাঘাট জেলার পদুমনি ২ নম্বর গ্রামে ঘটল এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ফরেনার্স ট্রাইবুনালের নির্দেশ মেনে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করা হয় অসমের গৃহবধূ রহিমা বেগমকে। অবশেষে প্রশাসনের “ভুল” ধরা পরার পর পুনরায় ভারতে ফিরিয়ে আনা হল তাঁকে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৫ মে, রবিবার। ওইদিন ভোর ৪টা নাগাদ রহিমা বেগমের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তাঁকে জানানো হয়, কিছু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে। পুলিশের কথামত তিনি নিজের সমস্ত বৈধ নাগরিকত্বের নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে থানায় যান। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে। সেখানে তাঁর আঙুলের ছাপ সহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ওই রাতেই রহিমাকে আরো বেশ কয়েকজনের সঙ্গে গাড়িতে করে এক অজানা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মঙ্গলবার রাতে রহিমা সহ বেশ কিছু জনকে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ধারে নিয়ে যাওয়া হয়। রহিমা বেগম অভিযোগ করেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাঁদের হাতে কিছু বাংলাদেশি টাকা তুলে দিয়ে বলেন, “এবার তোমরা চলে যাও, আর ফিরে এসো না।” উপায় না দেখে তাঁরা ধানক্ষেত পেরিয়ে বাংলাদেশের একটি গ্রামে পৌঁছন। কিন্তু সেখানে তাঁদের তাড়িয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড তাঁদের মারধর করে ফেরত পাঠিয়ে দেন।
রহিমা বেগম জানান, “আমরা সারা দিন ধানক্ষেতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। না এদিকে ফিরতে পারছি, না ওদিকে যেতে পারছি। খিদেয় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম, ধানক্ষেতের জল খেয়েই দিন কাটাতে হয়েছে,” বলেন। অবশেষে ২৯ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় সেনাবাহিনী তাঁদের আবার সীমান্ত থেকে নিয়ে আসে। বাংলাদেশি টাকা ফেরত নিয়ে, রহিমাকে কোকরাঝাড় হয়ে পুনরায় গোলাঘাটে ফিরিয়ে আনা হয়। পরদিন, ৩০ মে, রহিমার স্বামী মালেক আলিকে ফোন করে বলা হয়, তিনি যেন স্ত্রীকে গোলাঘাট শহর থেকে নিয়ে যান।
রহিমার আইনজীবী লিপিকা দেব জানান, ফরেনার্স ট্রাইবুনালে রহিমা বেগমের মামলাটি ইতিমধ্যেই নিষ্পত্তি হয়েছে। আদালত তার সিদ্ধান্তে জানায়, রহিমার পরিবার ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালের আগেই ভারতে প্রবেশ করেছে। ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের ধারা ৬এ (৩)-এর অধীনে তিনি বৈধ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে রেজিস্ট্রেশন নম্বরের একটি ডিজিট ভুল থাকার কারণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল।
আইনজীবী লিপিকা দেব বলেন, “আমরা পরে পুলিশ ও ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রেজিস্ট্রেশন নম্বরে সামান্য গরমিল ছিল। অথচ এ ধরনের একটি বিষয় যাচাই না করেই মানুষকে সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক ও অমানবিক।” যদিও এই বিষয়ে বিএসএফ-এর গৌহাটি ফ্রন্টিয়ার এবং গোলাঘাটের পুলিশ সুপার রাজেন সিং-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা কোনও মন্তব্য করেননি।