বছর ঘুরলেই ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বাংলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে বেনজির আক্রমণ শানিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার দুপুরে নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে শাহের মুখে উঠে এল দুর্নীতি থেকে তোষণ ইস্যু, আরজি কর থেকে সন্দেশখালি কাণ্ডও। পাশাপাশি ছাব্বিশে বাংলায় বিজেপি সরকার গড়বে বলেও দাবি শাহের।
বক্তব্যের শুরুতেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গে শাহ বললেন, “আমার বন্ধু, বাংলায় বিধানসভায় যিনি দাঁড়ালেই দিদির ভয় লাগে, এমন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।” মমতার সরকারকে সরাসরি নিশানা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলায় এই ভূমি বছরের পর বছর ভারতকে পথ দেখিয়েছে। কিন্তু সেই মহান বঙ্গভূমিকে অনুপ্রবেশ, দুর্নীতি, নারী অত্য়াচার, বোমা বিস্ফোরণ ও হিন্দু নিপীড়নের কেন্দ্রে পরিণত করেছেন মমতা দিদি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামানত জব্দ করার হুঁশিয়ারি দিয়ে গেলেন শাহ। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মমতার মন্তব্যের নিন্দা করে পাল্টা শাহ বলেন, “যখন বাংলার লোকেরা মারা গেলেন, তখন দিদি কিছু বলেননি। মোদীজি যখন অপারেশন সিঁদুরের পর এখানে এলেন, তখন একটি বাজে রাজনৈতিক মন্তব্য করে অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করা হল। মমতা দিদি শুধু অপারেশন সিঁদুরেরই বিরোধিতা করেননি, বরং দেশের কোটি কোটি মা-বোনের ভাবাবেগ নিয়ে খেলা করেছেন। বাংলার মাতৃশক্তির কাছে অনুরোধ, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রশ্ন তোলা মমতাজিকে সিঁদুরের দাম আগামী নির্বাচনে বুঝিয়ে দিন। মা-বোনেরা বুঝিয়ে দিন, সিদুঁরের অপমান করার অর্থ কী!”
তৃণমূল সুপ্রিমোকে নিশানা করে শাহ আরও বলেন, “আপনি যত ইচ্ছে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের পক্ষ নিন, এটা নরেন্দ্র মোদীর সরকার, বিজেপির সরকার। আমি বলে যাচ্ছি, অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি।” অনুপ্রবেশ ইস্যুতেও সুর চড়ালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের সীমান্ত বাংলাদেশিদের জন্য খুলে দিয়েছেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রবেশ ঘটছে। আপনি জেনে বুঝে সীমান্তে জমি দেন না, যাতে অনুপ্রবেশ চলতে পারে ও আপনার ভোটব্যাঙ্ক বাড়তে থাকে। দিদি-ভাইপো আটকাতে পারবেন? শুধুমাত্র পদ্মের সরকার আটকাতে পারবে।”
ইস্যু ধরে ধরে তৃণমূলকে আক্রমণ অমিত শাহের। তিনি বলেন, “এসএসসি দুর্নীতি, গরুপাচার, লটারি কেলেঙ্কারি, কয়লা দুর্নীতি, একশো দিনের কাজে দুর্নীতি, আবাসে দুর্নীতি, রেশন দুর্নীতি, মিড ডে মিল দুর্নীতি, পুর নিয়োগ দুর্নীতি ও জিটিএ দুর্নীতি হয়েছে মমতাদিদির আমলে। বাংলায় মানুষের টাকা তৃণমূলের সিন্ডিকেটের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।” তোষণ ইস্যুতেও সরব শাহ। বলেন, “ওয়াকফের বিরোধিতা করে মমতাদিদি কার পক্ষ নিচ্ছেন? আরজি কর হয়, সন্দেশখালিতে নারীদের অত্যাচার হয়, আর উনি নিজের ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে বসে রয়েছেন। সন্দেশখালি ও আরজি করের অভিযুক্তরা কোন দলের সঙ্গে যুক্ত?” প্রশ্ন শাহের।
ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে বিজেপির রণকৌশল নির্ধারণে তাৎপর্যপূর্ণ শাহের সভা। মঞ্চে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। শাহকে একটি কালীমূর্তি উপহারও দেন তাঁরা। শনিবার রাতেই কলকাতায় বাইপাসের ধারের হোটেলে ওঠেন শাহ। রবিবার সকালে নিউটাউনে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন তিনি।