সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
—————‐———
আবার মুখে মাস্ক? বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন বা মিড ডে মিলের ভাগ করে খাওয়ার মজায় বিধিনিষেধ? স্কুল ব্যাগে স্যানিটাইজার রাখা বাধ্যতামূলক? এ ধরনের একরাশ প্রশ্ন সঙ্গে নিয়েই আজ ফির কোমুখি সরকারি সরকার ভূষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের পড়ুয়ারা। দীর্ঘ গরমের ছুটির পর সোমবার থেকে খুলছে রাজ্যের সমস্ত সরকারি সরকার পশিত এবং সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলগুলি। পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে নিজেদের স্বাধীন চলাফেরা অথবা হাসি-আনন্দের ভাগাভাগিতে পড়বে না তো? এই চিন্তা মাথায় নিয়েই আজ স্কুল মুখে পড়ুয়ারা। স্কুলের আনন্দ কতটা মাটি করতে পারে এই নতুনভাবে গজিয়ে ওঠা করোনা সংক্রমণ? এখনো পর্যন্ত রাজ্যে সেভাবে কোন সতর্কবার্তা যেমন নেই তেমনি দেশজুড়ে করোনার প্রভাব নিয়ে কোন আতঙ্কের ছাপ নেই। বিশেষজ্ঞ রাও বলছেন করুণা সংক্রমণ ইতিমধ্যেই কিছুটা বাড়লেও তাতে ভয়ের কিছু নেই। তবুও কোন পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার কথা ভেবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দিচ্ছেন অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ। কোন আতঙ্ক বা সতর্কবার্তা নয়, তবে কুলে আসা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক যতটা সম্ভব ব্যবহার, সেনিটাইজার ব্যবহারের মাত্রা বাড়ানো, বাড়ি থেকে আনা টিফিন অথবা মিড ডে মিল একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে না খাওয়া, এখনই সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট নিয়ে কোন পদক্ষেপ না করলেও যতটা সম্ভব দুই ছাত্রের বসার জায়গায় ফারাক রাখা এই বিষয়গুলির উপ নজরদারি বাড়াতে চাই স্কুল কর্তৃপক্ষ। জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা অথবা এ ধরনের কোন উপসর্গ থাকলে সেই ছাত্র বা ছাত্রীকে আপাতত সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে না আসার পরামর্শ দেওয়ার কথাও ভেবেছেন বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই সতর্কতা অবলম্বনের বার্তাও পাঠানো হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষগুলির পক্ষ থেকে। সব মিলিয়ে আতঙ্ক নয় করোনা থেকে সতর্ক থাকতেই এই পদক্ষেপ বলে জানানো হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে।
শুধুমাত্র পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এই সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ নয় মূলত পঠন-পাঠনের বিষয়টিও এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছে। তীব্র দহনের জেরে চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় শুরু থেকেই রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে স্কুলগুলিকে গরমের ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে। দীর্ঘ গরমের ছুটি শেষে এবার যখন স্কুলের কাজ শুরু হতে চলেছে তখন করোনার সংখ্যা নতুন করে বিপত্তি বাড়িয়েছে। মূলত গরমের ছুটির পর জুন থেকে পূজোর ছুটির আগে পর্যন্ত স্কুল পড়ুয়াদের পঠন-পাঠনের বা সিলেবাস শেষ করার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম উপযোগী সময় বলে ধরা হয়। চলতি শিক্ষা বর্ষে দুর্গাপুজো এগিয়ে আসার কারণে এবার পুজোর ছুটিও আগস্ট মাসের শেষেই। সে ক্ষেত্রে জুন,জুলাই এবং আগস্ট মাসে স্কুল পড়ুয়াদের পঠন-পাঠন জোর কদমে এগিয়ে নিতে চায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে করোনা বিধি যদি নতুন করে চালু হয় সেক্ষেত্রে আখেরে স্কুলের পঠন-পাঠনের যেমন ক্ষতি হবে তেমনি স্কুল পড়ুয়াদের পড়াশোনাও ব্যাহত হবে এই চিন্তাই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি স্তরের স্কুলগুলির কাছে। নতুনভাবে করোনার সংক্রমণ শুধু সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলগুলিতেই নয়। বেসরকারি স্কুল গুলোর কাছেও একটা মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। বেসরকারি বা মিশনারি স্কুলগুলোতে সিলেবাস শেষ করার তাগিদ থেকেই এই চিন্তা আরও বেড়েছে। তাই সরকারি ও বেসরকারি সমস্ত স্কুলই করোনা বিধি চালু হোক বা না হোক পড়ুয়াদের সুস্বাস্থ্য ও পঠন-পাঠন স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে করোনা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বনকে শ্রেয় বলে মনে করছে। দীর্ঘদিন ছুটি কাটিয়ে সোমবার স্কুলমুখি হচ্ছে সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের পড়ুয়ারা।
সেকারণে চিন্তা মাথায় নিয়েই পড়াদের স্বাস্থ্য স্কুলের পরিচালন এবং পঠন পাঠনের কাজ সতর্কভাবেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চান স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।