ভারতীয় ক্রিকেটের সিংহাসনে বসতে চলেছেন ‘শুক্লাজি’। তিনি রাজীব শুক্লা। রাজনৈতিক সংবাদদাতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন যে রাজীব, গান্ধী পরিবারের দুই প্রজন্ম, কংগ্রেস, ক্রিকেট, বলিউড, আইপিএল— মিলেমিশে একাকার। মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে কয়েকটা দশক।
দিল্লির ৫ নম্বর সফদরজং রোড। ক্ষমতার অলিতে গলিতে এই ঠিকানা বহুশ্রুত। সব্বাই জানেন, ওটা শুক্লাজির বাড়ি। ২৪ ঘণ্টা, সাত দিন, প্রত্যেকের জন্য অবারিত দ্বার। কথিত আছে, শুক্লাজি কাউকে ফেরান না। বসার ঘরে ঢুকতেই নজরে পড়বে দেওয়াল জোড়া ছবির মেলা। প্রমোদ (মহাজন) -প্রণব (মুখোপাধ্যায়) পরবর্তী জমানা ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে জেনেছে রাজীবের নাম। কংগ্রেস থেকে বিজেপি, শাহরুখ থেকে অমিতাভ— যে কোনও শিবিরে অনায়াস যাতায়াতই শুক্লাকে আলাদা মাইলেজ দিয়েছে। কিন্তু কখনও সামনে এসে কৃতিত্ব দাবি করেননি। তারই কি পুরস্কার পেলেন রাজীব? বয়সের মাপকাঠিতে রজার বিনির সরে যাওয়া এক প্রকার স্থির ছিল। তাই অন্তর্বর্তী হিসেবে কাজ চালাতে শুক্লার চেয়ে বেশি ভাল লোক আর কই? কঠিন সময়ে আইপিএল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন। আবার ভোটের আগে দলবল নিয়ে পড়েছিলেন হিমাচল প্রদেশে। কংগ্রেসের সুখুকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে দিল্লি ফিরেছেন। যে কোনও হাই প্রোফাইল ব্যাপারে শুক্লাজির হাসিমুখ দেখতে পাওয়া মাস্ট। তিনি জয় শাহের পাশেও যেমন স্বাভাবিক, সনিয়া গান্ধীর পাশেও তেমন মানানসই। তিনি সকলের শুক্লাজি। অনেকেই মস্করা করে তাই বলেন, “শুক্লাজির স্পিড ডায়ালে মোদী যেমন আছেন, তেমন আছেন সোনিয়া-রাহুলও, আম্বানিও যেমন আছেন, শাহরুখ-সচিনও আছেন।” কথায় আছে, শুক্লাজি সর্বত্র বিরাজমান। কিছুই তাঁর চোখের আড়ালে হয় না।
এক ব্যক্তিগত আলাপচারীতায় তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আচ্ছা, আপনার বন্ধুর সংখ্যা কত?’ হো-হো করে হেসে বলেছিলেন, “শত্রুর সংখ্যা তা-ও গুনে বলতে পারি। বন্ধু গুনব কী করে?” তবে, বসার ঘরে যে দেওয়াল জুড়ে কেবল ছবি, তা দেখলে খানিক আঁচ করা যায়, বন্ধু বাছতে তিনি বেশ খুঁতখুঁতে। সবচেয়ে বড় ছবিটি সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে একটি গ্রুপ ফটো। অন্যটি তারকা কেটি পেরির সঙ্গে রাজীবের। শাহরুখ তাঁর কানে কানে কী সব বলছেন, একটি বড় ছবিতে ধরা আছে তা। অন্য যে ছবিটি দেওয়াল আলো করে আছে, তা হল ২০০২ সালের। লর্ডস ব্যালকনির। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জার্সি খুলে আকাশে ওড়াচ্ছেন, পিছনে মুচকি হাসি নিয়ে হাততালিরত শুক্লাজি। সেই রাজীব আজ বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট।
সূত্রের দাবি, শুক্লা প্রথমে তিন মাসের জন্য অস্থায়ী সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন। এর পর সেপ্টেম্বর মাসে যখন বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে, তখন পূর্ণসময় সভাপতির পদে প্রার্থী হতে পারেন। রজার বিনি ২০২২ সালের অক্টোবরে সৌরভের জায়গায় বিসিসিআই-এর ৩৬তম সভাপতি হন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত জিতেছে ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। পাশাপাশি, তাঁর আমলেই প্রথম বার আইপিএলের ধাঁচে চালু হয় মহিলা ক্রিকেটারদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগ। বিনি একজন প্রাক্তন অলরাউন্ডার। ভারতের হয়ে ২৭টি টেস্ট ও ৭২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে ১৮টি উইকেট নিয়ে দেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে বড় ভূমিকা নেন বিনি। বোর্ডের নির্বাচক কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।