সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
‘ চোকার্স ‘ তকমা ঘুচিয়ে শাপমুক্তি হবে কি বিরাট কোহলির? সচিন তেন্ডুলকর পেরেছিলেন, পারবেন কি কিং কোহলি? মঙ্গলবার অষ্টাদশ আইপিএল ফাইনাল ঘিরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ক্রিকেট বিশ্ব।
১৮ বছর ধরে আইপিএলে চমকপ্রদ পারফর্মেন্স বিরাট কোহলির। ২০০৯, ২০১১, ২০১৬ আইপিএল ফাইনালে উঠেছিল আরসিবি। ১৮ বছরের আইপিএল ইতিহাসে একাধিকবার প্লে অফ-এ পৌঁছেছে বিরাটের আরসিবি। কিন্তু লক্ষ্যপূরণ হয়নি বিরাট কোহলির। প্রতিবার বিরাটকে ফিরতে হয়েছে শূন্যহাতে। ২০২৫-এ ফের আইপিএল ট্রফি জয়ের হাতছানি। এবার কি পারবেন নিজের ‘ চোকার্স ‘ তকমা ঘোচাতে? হয়তো নিজের কাছে নিজেই এই প্রশ্ন করছেন কিং কোহলি স্বয়ং। ক্রিকেটপ্রেমীদের নিশ্চয়ই ২০১১ ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা মনে আছে। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতে ক্রিকেটের ঈশ্বর সচিন তেন্ডুলকরকে জয় উৎসর্গ করেছিল টিম ইন্ডিয়া। মহেন্দ্র সিং ধোনি থেকে দলের প্রতিটি সদস্য জানিয়েছিলেন সচিনের জন্যই এই বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া ছিল তাঁর টিমমেটরা। ফাইনাল ম্যাচ শেষে জাতীয় পতাকা হাতে ধরা সচিনকে কাঁধে তুলে গোটা মাঠ প্রদক্ষিণ করেছিলেন এই বিরাট কোহলিরা। বিশ্বকাপ জয়ের পর সচিন তেন্ডুলকার নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে তাঁর লক্ষ্যপূরণের চক্র সম্পূর্ণ হল। আজ ঘড়ির কাঁটা বহু পথ ঘুরে এসে পৌঁছেছে ২০২৫-এ। ওয়ান ডে বিশ্বকাপের মঞ্চ তৈরি হয়েছে আইপিএল ফাইনালে। সেদিন যিনি দেশের আইকনকে কাঁধে তুলে জয়ের মঞ্চের ময়দানে প্রদক্ষিণ করেছিলেন আজ তিনি দেশের অন্যতম ক্রিকেট আইকন। যদিও আইপিএল ট্রফি জয়ের লক্ষ্যটা এখনো অধরা বিরাটের। মঙ্গলবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে কি সেই স্বপ্ন পূরণের মঞ্চ তৈরি হবে? আরসিবির সতীর্থদের কাঁধে চড়ে ইগোটা মাঠ প্রদক্ষিণ করবেন সদ্য টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানো কিং কোহলি? আরসিবি অধিনায়ক রজত পাটিদার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন কোহলির জন্য ট্রফি জিততে মরিয়া গোটা আরসিবি। ১৮ বছর ধরে আরসিবির জন্য বিরাট কোহলির যে অবদান তার প্রতিদানে এবারের আইপিএল ট্রফি বিরাটের হাতে তুলে দিতে মরিয়া আরসিবি পরিবার এমনটাই জানিয়েছেন আরসিবি অধিনায়ক। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেটের বরপুত্র সচিনের জন্য একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির মুখে। অর্থাৎ মঞ্চ প্রস্তুত, এবার শুধু লক্ষ্যপূরণের পালা। আর তা নিয়েই এখন প্রহর গুনছে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব।
শুধু ক্রিকেটের মঞ্চই নয়, ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক স্তরে ফুটবলের মহারণ লক্ষ্য করলেও দেখা যাচ্ছে লক্ষ্য পূরণের মঞ্চে সফল হয়েছেন ‘ চোকার্স ‘ রাই।
উয়েফা ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চলতি বছরেই সেরার শিরোপা পেয়েছে অন্যতম চোকার্স
টটেনহাম হটস্পার্স। ইউরোপের ফুটবল দুনিয়া যাদেরকে ‘ SPURSY ‘ বলেই দীর্ঘদিন ধরে ডাকে যার অর্থ ‘ চোকার্স ‘ এর সমতুল। গত ১৭ বছর ধরে যাদের ভাগ্যে জোটেনি কোনও ট্রফি তারাই এবার ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন। একইভাবে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও এবার নয়া ইতিহাস। এবার ইউরোপ সেরার তকমা পেয়েছে প্যারিস সাঁ জারমা বা পিএসজি। একাধিকবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠলেও এমনকি ২০২০ সালের ফাইনালে উঠে ট্রফি জয়ের খরা কাটেনি পিএসজির। ২০২৫-এ ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেছে লিওনেল মেসি, নেইমার, এমবাপে দের প্রাক্তন ক্লাব পিএসজি। তারকা খ্যাত হয়েও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি জয় অধরাই রয়ে গিয়েছিল পিএসজির। তথাকথিত তারকা হীন দল হয়ে এবার অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে ফ্রান্সের বর্তমান সময়ের সেরা ক্লাব। স্বাভাবিকভাবেই ২০২৫ এর খেলার দুনিয়ায় এবার আরও একটি মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। লক্ষ্যপূরণে সফল হতে পারবে কিং কোহলির আরসিবি? একযুগ পর সচিন তেন্ডুলকরের জয়গাঁথার নায়ক হওয়ার স্মৃতি কি ফেরাতে পারবে কিং কোহলির চওড়া ব্যাট? এই প্রশ্ন উন্মাদনা নিয়েই এখন অধীর অপেক্ষা ক্রিকেট বিশ্বের।