‘সুখোই’ গতিতে ছুটবে এবার জগন্নাথ প্রভুর রথ! অবাক হচ্ছেন? দীর্ঘ ২০ বছর পর বদল হল ‘নন্দীঘোষ’ জগন্নাথ দেবের রথের চাকা। লাগানো হল যুদ্ধবিমানের চাকা। তাও আবার কি না রাশিয়ান সুখোই ৩০ এর চাকা। এই যুদ্ধবিমান রানওয়েতে ২৮০ কিমি থেকে ২৯০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় ছুটতে সক্ষম, এবার সেই চাকাতেই এবার কলকাতার রাজপথে গড়াবে রথ। আগামী ২৭ জুন রথযাত্রা। জোর প্রস্তুতি চলছে ইসকনে।
তার আগেই বদলে ফেলা হল রথের চাকা। বোয়িং ৭৪৭ বিমানের চাকার বদলে চতুর্থ প্রজন্মের ফাইটার জেট সুখোই ৩০-এর টায়ার লাগানো হল। ইতিমধ্যে কলকাতার রাস্তায় রথের ‘ট্রায়াল রান’ করা হলেও তা সফল। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি খুব একটা সহজ ছিল না। এই প্রসঙ্গে ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস জানিয়েছেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে টায়ারের খোঁজ চলছিল। জগন্নাথ দেবের রথে বোয়িং ৭৪৭ বিমানের চাকা লাগানো ছিল। কিন্তু সেটির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বেরিয়ে পড়েছিল তার। ফলে দ্রুত চাকাগুলির বদলের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়।
সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাধারমণ জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে প্রথম লক্ষ্য করি জগন্নাথ দেবের রথে ব্যবহৃত চাকা অনেক পুরানো হয়ে গিয়েছে। সেই সময় থেকেই নতুন চাকার খোঁজ শুরু হয়। প্রথমে বোয়িং বিমানের চাকার খোঁজ শুরু হয়। কিন্তু পুরানো মডেল হয়ে যাওয়ায় তা যে পাওয়া আর সম্ভব ছিল না বলে জানা যায়। ইসকন কর্তার কথায়, সাধারণ কোনও চাকা ওই রথে লাগানো যেত না। কারণ সেটি এতটাই ভারী যে তা যে কোনও চাকার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হত না। আর তাই গভীরে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করেন রাধারমণ দাস।
সেই সময় তিনি দেখেন সুখোই যুদ্ধবিমানে যে চাকা ব্যবহার করা হয় সেটি রথে ব্যবহারযোগ্য হতে পারে! যেমন ভাবনা তেমন কাজ! এই বিষয়ে রাশিয়ার সুখোই নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। জানতে পারেন এই চাকা ভারতের টায়ার নির্মাণ সংস্থা এমআরএফ তৈরি করে।
রাধারমণ দাসের কথায়, ২০১৮ সালে এমআরএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও দীর্ঘ ৬ বছর পর উত্তর পাওয়া যায়, কেন এমন চাকা দরকার এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সেই মতো পুরো বিষয়টি জানানো হয় এবং গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এমআরএফের বিশেষ টিম আসে পুরো বিষয়টি দেখতে।
রাধারমণ জানান, এমআরএফকে যখন প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয় সেই সময় সংস্থার আধিকারিকরা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। সংস্থা জানিয়েছিল, এই টায়ারের একমাত্র ক্রেতা ভারতীয় বায়ুসেনা। এরপর টিম এসে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখেন এবং সম্প্রতি সেই চাকা পাওয়া যায়। জানা গিয়েছে, রথে চাকা প্রতিস্থাপন প্রায় সম্পন্ন। রাধারমণ জানাচ্ছেন, জগন্নাথ দেবের রথের নতুন চাকা নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। অনেকেই আসছেন সেলফি তুলতে।