সাংবাদিক দিব্যেন্দু ঘোষ এর সাথে আমার পরিচয় বেশ অনেক দিনের। লেখক দিব্যেন্দু ঘোষ এর দ্বিতীয় বই প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়ে গেলো শনিবার দুপুরে। মনোরম ভ্রমণ গল্প, প্রকৃতি, নারী, ও প্রেম এই নিয়েই ওর লেখা বই আবার আসিব ফিরে। আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ও বই এর মোড়ক উন্মোচন হলো এদিন। মোড়ক উন্মোচন করলেন বিশিষ্ট নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক ও অভিনেতা চন্দন সেন। হাজির ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক নলিনী বেরা, বিশিষ্ট চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস, বিশিষ্ট ফুটবলার দেবকুমার শাসমল ও তৃণমূল নেত্রী সুজাতা মণ্ডল। শনিবার, নলিনী গুহ সভাঘরে হলো এই বই প্রকাশ এর অনুষ্ঠান। আসলে বিভিন্ন চ্যানেলে কাজ করার সুবাদে ওর হেডলাইন করা, প্যাকেজ লেখা, কাগজে কাজ করা এই দীর্ঘ দিনের সাংবাদিকতার পাশাপাশি ওর লেখার হাত বরাবর ভালোই। বানান নিয়ে সংশয় হলেই ওর কাছে ছুটে যাওয়া। সেই একটি চ্যানেলে ডাক্তারদের নিয়ে একটি শো তে ওর লেখা প্যাকেজ একদম হিট শুধু নয় সুপারহিট। আসলে টিভির এই বক্সের জগৎ থেকে শুরু করে কাগজের মাঠে ময়দানে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ানো ওর। আর সেই আমাদের চেনা দিব্যেন্দু ঘোষ এর বই প্রকাশ অনুষ্ঠান। যে লেখায় সে ফিরে আসার কথা বলেই নিজেই প্রকৃতি মাঝে হারিয়ে গেছে। ওর হারিয়ে যেতে নেই মানা। জীবনের এই দর্শনকে আঁকড়ে ধরেই টিকে আছে সে। আর তাই বোধহয় আবার আসিব ফিরে এই কথা বলেই কেমন হারিয়ে গেছেন লেখক।তবুও সব হারানো বোধহয় হারনো নয়। সেই ছোট থেকেই তাঁর পায়ের তলায় সর্ষে। যখন লিখতে ইচ্ছে হল, স্মৃতি হাতড়ে তেমন কিছু এল না। তাই কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে ছুটে বেড়ানো। সে সব নিয়েই গল্পের মতো ভ্রমণ। ঠিক চিরাচরিত ভ্রমণ কাহিনি নয়, আবার ভ্রমণ কাহিনিও বটে। কেউ বলতেই পারেন উঠল বাই, কেউ বলতে পারেন বাজল ছুটির ঘণ্টা, কেউ বলতে পারেন গল্পের ছলে ভ্রমণ। কখন যাবেন, কোথায় থাকবেন, কী দেখবেন-এর থেকেও বেশি মানুষের গল্প, প্রকৃতির গল্প, প্রেমের গল্প। প্রকৃতি, নারী, প্রেম কখন যেন আচ্ছন্ন করে ফেলে ভ্রমণের এই লেখাগুলিকে। যা দেখেছেন, শুনেছেন, অনুভূতিকে সমৃদ্ধ করেছে, যা শিখেছেন, যা তাঁর নিত্য যাপনকে প্রাভাবিত করেছে তারই আঁখো দেখা হাল। লোকের মুখে শোনা নয় বা নেট ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ নয়, এ লেখা প্রকৃত অর্থেই জীবন্ত, দৃষ্টির বিশ্বাস থেকে তুলে আনা নির্ভীক দলিল। কোথায় যাবেন, কখন যাবেন, কোথায় থাকবেন, কত খরচ, ভ্রমণার্থীদের জন্য এ সব তথ্যসমৃদ্ধ লেখা বাংলা ভাষায় বহু। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা হোক বা বই, তার সংখ্যাও প্রচুর। ভ্রমণ কাহিনির প্রাথমিক শর্ত এগুলোই। মানে, ভ্রমণের একটি লেখা পড়ে পাঠক সেখানে যেতে চাইবে, বাড়িতে বসেই তার চোখের সামনে সেই জায়গাটা ভাসবে, নিজেকে ঠিক সেখানটায় নিয়ে গিয়ে ফেলতে অসুবিধে হবে না। এটাই ভ্রমণ কাহিনির মৌলিক শর্ত। এই শর্ত মাথায় রেখেই আবার আসিব ফিরে। অবহেলিত ভ্রমণ সাহিত্যের ঠোঁটে একফোঁটা প্রাণ-জল। প্রতিটি লেখাই নিজের মতো করে মৌলিক, পাঠক পড়তে শুরু করলেই সেই মৌলিকত্বের সঙ্গে পরিচিত হবেন সহজেই। শুধু ভ্রমণপিপাসু নয়, বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক এ বই হাতে তুলে নেবেন সাহিত্যের রসাস্বাদনের জন্য। মোদ্দা কথা, ভ্রমণের একটা বই বিভিন্ন ধারার পাঠকের মনোরঞ্জন করবে, পাঠককে ছুটিয়ে নিয়ে যাবে, মনের মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর ভালবাসা জাগিয়ে তুলবে। কোনও এক পাঠক এ বই পড়লে, তার প্রিয়জনদের পড়তে বলবেন, এবং যাদের পায়ের তলায় সর্ষে, তারা রুকস্যাকে যত্ন করে রাখবেন, কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে এ বই নিতে ভুলবেন না।