অবশেষে যুদ্ধবিরতি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বড় ধরনের মতবিরোধের কয়েক দিন পর, বিলিয়নিয়ার এলন মাস্ক এবার স্বীকার করে নিলেন যে তাঁর এখন খারাপই লাগছে। টুইটারে টেসলা কর্তা এলন মাস্ক লিখেছেন, “গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে আমার কিছু পোস্ট নিয়ে আমি অনুশোচনা করছি। আমি সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলাম।” একটা সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বৃত্তে থাকা মাস্কের এই বিদ্রোহ নিয়ে বিপুল জল্পনা তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন মহলে।তবে এই বিদ্রোহ বা যুদ্ধের এখানেই ইতি ঘটল কি না তা সময়ই বলবে। কোন পরিস্থিতিতে এলন মাস্ককে এমন পোস্ট করতে হল প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।
এবারের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের বন্ধু হিসেবে পাশে দাড়িয়ে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছিলেন এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে বড়লোক এলন মাস্ক। জয়ের পরে এই বন্ধুকেই ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’র প্রধানের পদে বসান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মার্কিন সরকারের ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যেই তৈরি হয়েছিল দফতর। কিন্তু ব্যয়ের দিশা নিয়ে মতপার্থক্যের কারণ দেখিয়ে একটু আগেই সেই পদ থেকে মাস্ক সরে দাঁড়ান মাস্ক। সম্ভবত তাল কাটে তখনই। অথচ এর ঠিক এক সপ্তাহ আগেই ট্রাম্প মাস্কের নেতৃত্বে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ (DOGE)-র কাজের প্রশংসা করেছিলেন।
মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত ব্যয় বিল নিয়ে মাস্কের তীব্র সমালোচনার সময়। তিনি বিলটিকে ‘জঘন্য বিকৃতি’ বলে অভিহিত করেন।পাশাপাশি এই বিলকে সমর্থনকারী রিপাবলিকান ল মেকারদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার আহ্বান জানান। হোয়াইট হাউসও অবশ্য এই মন্তব্যে ছেড়ে কথা কয়নি। শনিবার এনবিসি নিউজকে ট্রাম্প জানান, রিপাবলিকানদের বিরোধিতায় মাস্ক যদি আর্থিকভাবে সমর্থন দেন, তবে তা হলে ‘খুব গুরুতর পরিণতি’ অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। কী পরিণতি হবে তা স্পষ্ট না করলেও ট্রাম্প বলেন, “যদি ও এটা করে, তবে তাকে এর মূল্য দিতে হবে”। স্পেস এক্স কর্তার সঙ্গে আপসে তাঁর আগ্রহ নেই এমনটা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমি ওর সঙ্গে আর কথা বলার কোনো ইচ্ছা রাখি না।”
তবে বিবাদ আরও মাত্রা ছাড়ায় যখন মাস্ক একাধিকবার দাবি করেন, বিতর্কিত জেফরি এপস্টিনের সঙ্গে ট্রাম্পের যোগসূত্র রয়েছে। মাস্ক লেখেন, “বড় বোমা ফেলার সময় হয়েছে।”তিনি অভিযোগ তোলেন, কিছু অপ্রকাশিত সরকারি নথি ইচ্ছাকৃতভাবে চাপা রাখা হয়েছে। ফলো-আপ পোস্টে মাস্ক লেখেন, “এই পোস্টটা ভবিষ্যতের জন্য চিহ্নিত করে রাখুন। সত্যি একদিন প্রকাশ পাবে।” যদিও গত শনিবার কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই ওই সব পোস্ট হঠাৎ করেই মুছে দেওয়া হয়।
এপস্টিন অভিযোগের উত্তরে ট্রাম্প এনবিসি-কে বলেন, মাস্কের অভিযোগ আসলে একটা ‘পুরনো কথা’। সামাজিকভাবে এপস্টিনকে চিনলেও এপস্টিনের ব্যক্তিগত দ্বীপে যাওয়া বা কোনো বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত থাকার কথা তিনি অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। তিনি জানান, “এপস্টিনের আইনজীবী পর্যন্ত বলেছে, আমার কোনো যোগ নেই।”
এবার বিপুল ক্ষমতাধর মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এহেন লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ার পর হঠাৎ করেই এলন মাস্কের প্রেসিডেন্ট বিরোধিতায় অনুশোচনা এবং সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার বার্তায় অবাক বিশ্ব। ট্রাম্পের বলা ‘খুব গুরুতর পরিণতি’ই এর পিছনে কাজ করেছে কিনা জল্পনা তৈরি হয়েছে তা নিয়েও।
Leave a comment
Leave a comment
