ইজরায়েল–ইরান হামলার জেরে তৈরি হওয়া সঙ্কটে এবার বাড়তি অক্সিজেন জোগাল আমেরিকার বোমা হামলা।মধ্যপ্রাচ্যের এই যুদ্ধ পরিস্থিতি তীব্র হওয়ার শঙ্কায় ধস নামতে শুরু করেছে এশিয়ার বাজারগুলোতে।আর গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে তেলের দাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালানোর পর জ্বালানি বাজারে তার সরবরাহ ঘিরে ব্যাপক শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরান আগেও হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি দিলেও কখনও তা বাস্তবে পরিণত করেনি। তবে আমেরিকার হামলার পর ইরানের সংসদ এই প্রণালী বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বলে জানিয়েছে ইরানের প্রেস টিভি।
মার্কিন হামলার পর তার জবাব দিতে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে, শেয়ারবাজারে এই আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন স্টক এক্সচেঞ্জে। কারণ এই প্রণালী দিয়েই বিশ্বের মোট তৈল বাণিজ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং ২০% লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস সরবরাহ হয়। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের প্রতিশোধ নেওয়ার একটি পথ হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া।এই প্রণালী মাত্র ৩৩ কিলোমিটার চওড়া এবং কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের নবম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরান প্রতিদিন প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে, যার প্রায় অর্ধেক রপ্তানি করে এবং বাকিটা নিজেদের ব্যবহারের জন্য রাখে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে এই সরবরাহ ব্যাহত হবে, যা বিশ্ববাজারে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। ইতিমধ্যেই তেলের দাম ২ শতাংশ বেড়ে জানুয়ারি মাসের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ২.৭% বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৯.১২ ডলার এবং মার্কিন ক্রুডের দাম ২.৮% বেড়ে ৭৫.৯৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার দিনের শুরুতেই এশিয়ার শেয়ার বাজারেও ধস নেমেছে।ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলার হুমকি দেওয়ায় গোটা অঞ্চলে সংঘাত বৃদ্ধির আশঙ্কা আরও বাড়ছে।উদ্বেগের মধ্যে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।এনডিটিভির রিপোর্ট বলছে এশিয়ায়, টোকিওর নিক্কেই সূচক ০.৬%, সিউল ১.৪% এবং সিডনি ০.৭% নিচে বন্ধ হয়েছে। এমএসসিআই-এর জাপান বাদে এশিয়া-প্যাসিফিক শেয়ার সূচকও ০.৫% কমেছে। মার্কিন শেয়ার বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার্স ০.৫% এবং নাসড্যাক ফিউচার্স ০.৬% কমেছে। ইউরোপে, ইউরোস্টক্স ৫০ ফিউচার্স ০.৭%, এফটিএসই ফিউচার্স ০.৫% এবং ড্যাক্স ফিউচার্স ০.৭% কমেছে। ইউরোপ ও জাপান আমদানিকৃত তেল ও লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস -এর উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
তবে আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে হরমুজ প্রণালী পুরোপুরি বন্ধ করার চেয়ে নির্বাচিত কিছু তেল ট্যাঙ্কার চলাচলে বাধা দেওয়াই ইরানের জন্য বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। কারণ এতে তাদের নিজেদের তেল রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যাবে। আর যদি পুরোপুরি বন্ধ হয় তাহলে ব্রেন্ট তেলের দাম অন্তত ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারে পৌঁছে যাবে বলেই আশঙ্কা।
Leave a comment
Leave a comment