সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
২২ বছর পর ফের বিহারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের চিহ্নিতকরণ বা যাচাইকরণ করবে নির্বাচন কমিশন। চলতি বছরের শেষেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে ত্রুটিমুক্ত ও নির্ভুল ভোটার তালিকার মাধ্যমে বিহারের প্রতিটি যোগ্য ভোটারকে তার সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ করে দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। সে কারণেই ২০০৩ সালের পর ফের বিহারে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন করতে ভোটারদের দুয়ারে-দুয়ারে যাবেন নির্বাচন কর্মীরা। ভোটার তালিকায় সংযোজন ও বিয়োজনের কাজে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং তার যাচাইকরণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের চিহ্নিত করবেন নির্বাচন কর্মীরা। শুধুমাত্র যাচাই করার কাজই নয়, এই স্পেশাল রিভিশনের মাধ্যমে বিহারের প্রতিটি যোগ্য ভোটার ভোটদানের অধিকারের সুযোগ পাচ্ছেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। মূলত দ্রুত নগরায়ন, ভোটারদের স্থানান্তর, নতুন প্রজন্মের ভোটাধিকার হওয়া, মৃত ভোটারের নাম নথিভূক্ত না করা এবং বহিরাগতদের নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া এই ধরনের একাধিক কারণে ভোটার তালিকার এই যাচাইকারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংশোধিত ভোটার তালিকা কতটা নির্ভুল বা স্বচ্ছ তা খতিয়ে দেখতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই যাচাইয়ের কাজ করবেন বুথ লেভেল অফিসাররা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত এই ধরনের স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন সংবিধানের ৩২৬ অনুচ্ছেদ এবং ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন,১৯৫০ কে মান্যতা দিয়েই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০ এর ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি ভোটারের নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ইআরও। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে সঙ্গেই ভোটারের যাবতীয় নথিপত্র ECINET এর মাধ্যমে বুথ লেভেল অফিসারদের কাছে পৌঁছেছে। এমতাবস্থায় রেজিস্টিকৃত ভোটারের নথিপত্র ফের একবার যাচাই করতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারের বৈধতা চিহ্নিত করবেন সংশ্লিষ্ট বুথ লেভেল অফিসার। যে অভিযানকে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন বলে উল্লেখ করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। এরপরেও যদি ভোটার তালিকা নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে AERO নিজে গিয়ে সেই অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারবেন। নির্বাচনী বৃদ্ধিতে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কাজকর্ম খতিয়ে দেখার অধিকার রয়েছে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক বা ডিইও যিনি পদাধিকার বলে জেলাশাসক এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের। কমিশনের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়েছে যে নির্বাচনী গণতন্ত্রে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভোটারদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই স্বচ্ছ অবাধ অসুস্থ নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বার্থে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দেশের সমস্ত বুথে বুথ লেভেল এজেন্ট বা বিএলএ নিযুক্ত করার আবেদন জানানো হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। একইসঙ্গে প্রতিটি যোগ্য ভোটারের পাশাপাশি বয়স্ক অসুস্থ ও বিশেষ উপায় শারীরিকভাবে সক্ষম ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং উদ্যোগ নিতে হবে এই মর্মে রাজ্যস্তরে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক, জেলাস্তরে জেলা নির্বাচনী অধিকারিক, বুথ স্তরে বুথ লেভেল অফিসারদের বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।